অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কি?
Home >Blogs >অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কি?

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কি?

Summary

‘অ্যাঞ্জিও’ কথার অর্থ হল রক্তবাহ এবং ‘প্লাস্টি’ শব্দটির অর্থ হল খুলে দেওয়া। অ্যানজিওপ্লাস্টি হল করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। ধমনীর ভিতরের দিকে ‘প্লাক’ জমলে এই পদ্ধতিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনী খুলে দেওয়া হয়। ‘প্লাক’ রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ফলে তৈরী হয়।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কি?

‘অ্যাঞ্জিও’ কথার অর্থ হল রক্তবাহ এবং ‘প্লাস্টি’ শব্দটির অর্থ হল খুলে দেওয়া। অ্যানজিওপ্লাস্টি হল করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বহুল প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। ধমনীর ভিতরের দিকে ‘প্লাক’ জমলে এই পদ্ধতিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনী খুলে দেওয়া হয়। ‘প্লাক’ রক্তে অতিরিক্ত কোলেস্টেরলের ফলে তৈরী হয়। ধমনীর এই রকম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে মেডিকেলের ভাষায় বলে ‘অ্যার্থেরোস্কেলেরেসিস’।হার্ট অ্যাটাকের ফলে জমে যাওয়া প্লাকগুলো ভেঙে যায় এবং ধমনীর নানা অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। সেগুলোকে বেলুন সার্জারির সাহায্যে অপসারণ করা হয়।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার জন্য রোগীর যে নিয়মগুলো মেনে চলা প্রয়োজন

অ্যানজিওপ্লাস্টি একটি মিনিমালি ইনভেসিভ পদ্ধতি। অর্থাৎ খুবই অল্প কাটা ছেঁড়া করার দরকার পরে। তবুও এটা এক ধরনের সার্জারি। তাই কিছু নিয়ম মেনে চলতেই হয়।

  • প্রথমেই রোগীর কি কি ওষুধ চলছে তা ডাক্তারবাবুকে জানাতে হবে।
  • আপনি যদি অ্যাসপিরিন বা রক্ত ​​পাতলা ওষুধ গ্রহণ করেন তবে আপনার ডাক্তারকে বলুন। প্রয়োজনে, কার্ডিওলজিস্ট ডাক্তার আপনাকে অস্ত্রোপচারের কয়েক দিন আগে ওষুধ বন্ধ করার পরামর্শ দিতে পারেন।
    ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী সার্জারীর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে খাদ্য এবং পানীয় গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হবে।
  • কিডনির পরীক্ষা করতে হতে পারে।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কিভাবে করা হয়?

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার সাধারণ স্টেপ গুলো হল - 

  • প্রথমেই দেহের যে অংশ দিয়ে ক্যাথিটার ঢোকানো হবে সেই জায়গাটা নার্স ভাল করে অ্যান্টিসেপটিক লোশন দিয়ে স্যানিটাইজ করে দেবেন। ক্যাথিটার সাধারণত কুঁচকি বা হাতের কবজির মত জায়গা দিয়ে শরীরে ঢোকানো হয়।
  • এরপর সার্জেন ক্যথিটারটি ধমনীর মধ্য দিয়ে করোনারি আর্টারির দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি এক্স-রে গাইডেড মনিটরের দেখে করা হয়। 
  • ক্যাথিটারটি সঠিক স্থানে পৌঁছলে সার্জেন একটি ডাই (রঞ্জক) ইঞ্জেক্ট করেন যাতে হৃদপিন্ডের ব্লকেজটাকে পরিষ্কার ভাবে চিহ্নিত করা যায়। এরপর গাইড ওয়ার (তার) সমেত একটা দ্বিতীয় ক্যাথিটার শরীরে ঢোকানো হয়। সাধারণত একটি বেলুন সেটার মাথায় আটকানো থাকে।
  • দ্বিতীয় ক্যাথিটারটি সঠিক স্থানে চলে এলে সার্জেন বেলুনটিকে ফোলান। স্ফীত বেলুন্ টি জমা প্লাকগুলোকে ঠেলে সরিয়ে দেয়। এতে ব্লকেজ খুলে যায়।
  • অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি সার্জারি উইথ স্টেন্ট - স্টেন্ট হল মেটাল বা ধাতুর তৈরী টিউবাকৃতির জালক যা ধমনীকে চুপসে যাওয়ার হাত থেকে আটকায়।এই স্টেন্ট ক্যাথিটারের সাথে যুক্ত করা থাকে যা ব্লকেজের স্থানে প্রতিস্তাপিত করা হয়।বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বি-এম-এসের (বেয়ার মেটাল স্টেন্ট)পরিবর্তে ডি-ই-এস (ড্রাগ ইল্যুটিং স্টেন্ট) ব্যবহার করা হয়। এই স্টেন্ট থেকে যে ড্রাগ বের হয় তা পুনরায় আর প্লাক জমতে দেয় না।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করতে কতক্ষণ সময় লাগতে পারে?

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার জন্য সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে (রোগের জটিলতা) এই সময় কিছুটা কম-বেশি লাগতে পারে।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরে জ্বর

যেকোনো ধরণের সার্জারির পর জ্বর একটি সাধারণ বিষয়। শরীরে অস্ত্রোপচার হয়ে যাওয়ার পর অর্ধেকের বেশি রোগীর দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তবে সাধারণত এই জ্বর খুব বেশি বিপজ্জনক হয় না। আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসিটোনামেন জাতীয় ওষুধ দিয়েই এর চিকিৎসা করা হয়। যদিও ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা অত্যন্ত জরুরী। সার্জারীর পর এই ধরনের জ্বরের কারণ সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, মূত্রনালীতে ইনফেকশন ইত্যাদি। তবে অনেক সময় নন-সার্জিক্যাল কারণেও, যেমন ভাইরাসের সংক্রমণ, সেপ্টেমসিয়া ইত্যাদিও, জ্বর আসতে পারে। স্টেন্ট বসানোর পর অনেক সময় স্টেন্টের কনট্রাস্ট মেটিরিয়ালের প্রতি রোগীর শরীরের অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ায় জ্বর আসে।

হার্ট অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির পরে অবলম্বিত সতর্কতা

হার্ট অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হৃদপেশিতে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করে। রোগী জীবনের ঝুঁকি কমে যায়। তবে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানোর পরেও রোগীকে বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হয়। যেমন -

  • ১২ ঘন্টা থেকে ২৪ ঘন্টা সার্জারীর ক্ষত অংশ টি কে শুকনো রাখতে হবে।
  • ছেদ করা অংশটিতে যেন কনটামিনেসান না ঘটে। খেয়াল রাখতে হবে ঐস্থানটি লালচে হয়ে ফুলে যাচ্ছে কিনা। সেখান দিয়ে রস গড়াচ্ছে কিনা।
  • যদি এমন কিছু দেখতে পাওয়া যায় তাহলে রোগী কে শুইয়ে দিয়ে দ্রুত ডাক্তারবাবুকে খবর দিতে হবে। 
  • কায়িকশ্রমের কাজ একা না করা উচিত। যতক্ষন না রোগী পুরোপুরি ফিট হচ্ছেন ততক্ষন অন্যের সাহায্য নিতে হবে।
  • যেকোন মেডিক্যাল প্রসেস চলাকালীন মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। সেটাকে কাটিয়ে উঠুতে হবে।
  • রোগীর নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখতে হবে।

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসানোর পরে নেওয়া পদক্ষেপ

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির ক্ষেত্রে রোগী কে সাধারণত অপারেশনের দিন বা তার পরের দিন হাসপাতেল থেকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এই সময় - 

  • ভারি কিছু তোলা বা পরিশ্রমসাধ্য কাজ করা কঠোর ভাবে বারণ। 
  • ওষুধের প্রভাব থাকার জন্য রোগীর পক্ষে নিজে ড্রাইভিং বা বাইক না চালানোই ভাল। 
  • যদি রোগীর যৌন জীবন অ্যানজিনার জন্য ব্যাহত হয়ে থাকে তাহলে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করার কিছুদিন পর থেকে তিনি তা পুনরায় শুরু করতে পারবেন। তারপরেও যদি কোন অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুকে জানাতে হবে। 
  • বেশিরভাগ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির রোগী কে সার্জারীর পর ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মত প্রায় এক বছর পর্যন্ত রক্ত-তরলকারী ওষুধ খেতে হয়। যেমন অ্যাস্পিরিন এবং ক্লপিডোগ্রেল বা ট্রাইকাগেলর এর কম্বিনেশন। নিয়ম মত ওষুধ খাওয়াটা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আচমকা ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেড়ে যাবে। পুনরায় অ্যার্টারিতে ব্লকেজ কিম্বা অ্যানজাইনার লক্ষণও দেখা যেতে পারে। তখন করোনারি অ্যার্টারি বাইপাস গ্রাফটিং জরুরী হয়ে পরে। 

অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করানোর পরে ব্যথা 

স্টেন্ট বসানোর পর অত্যধিক সংবেদনশীলতার (টেন্ডারনেস) জন্য বুকে ব্যাথা করতে পারে। তবে এটা কিছুদিনের মধ্যেই কমে যায়। এই সময় ডাক্তারবাবুর মতামত নিয়ে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। স্টেন্ট বসানোর জন্য অ্যার্টারি বা ধমনীতে ট্রমা তৈরি হতে পারে। এর কারন স্টেন্টের সাথে ধমনীর আঘাত বা ঘসা লাগা। যতক্ষণ না স্টেন্টটির সাথে রোগীর শরীর ধাতস্থ হচ্ছে ততক্ষণ এই রকম অস্বস্তি হতে পারে। এই ধরনের অস্বস্তি ব্যাথা সাধারণত বুকের একটা নির্দিষ্ট স্থানে হয়ে থাকে।

Written and Verified by:

Dr. Ratan Kumar Das is associated with BM Birla Heart Research Centre as a Director of CTVS. In the past, he has been associated with Hospitals like St. George Hospital in Sydney, Australia. His areas of interest lies in off-pump CABG with LIMA-RIMA Y, Mitral Valve repair, Minimally Invasive Valve Surgery, CABG and Paediatric Cardiac Surgery.

Related Diseases & Treatments

Treatments in Kolkata

Cardiac Surgery Doctors in Kolkata

NavBook Appt.WhatsappWhatsappCall Now