Cardiac Surgery | by Dr. Manoj Kumar Daga
বাইপাস শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। এর অর্থ শহরের ভিতরে মূল রাস্তার যানজট এড়াতে শহরের বাইরে দিয়ে রাস্তা বানিয়ে শহরের দুই প্রান্তকে জুড়ে দেওয়া। ফলে যান জট কমার সাথে সাথে গাড়ির গতিও বেড়ে যায়। হার্টের ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারীও অনেকটা সেইরকমই। আসুন আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি সম্মন্ধে বিশদে জানার চেষ্টা করি।
হৃদপিন্ড হল মানবদেহের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা পাম্পের মত আমাদের সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে। বাড়িতে জলের পাম্প যেমন একদিকে জলের উ ৎসের সাথে এবং অন্যদিকে জল বিতরণ-কারী নলের সাথে যুক্ত থাকে, ঠিক তেমনি আমাদের হৃদপিন্ড শিরা এবং ধমনীর (রক্তবাহ) সাথে যুক্ত থাকে। ধমনী বা আর্টারি সারা দেহে অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। যে ধমনী হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ করে তা হৃদ-ধমনী বা করোনারো আর্টারী নামে পরিচিত।
যখন হৃদ-ধমনী বা করোনারী আর্টারী কোনো কারণে ব্লক হয়ে যায় বা অবরুদ্ধ হয়ে পরে তখন হৃদপিন্ডের পেশীগুলোতে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ কমে যায়। এতে নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
তাই হার্ট সার্জেনরা শরীরের অন্য কোনো স্থান থেকে সুস্থ ধমনীর একটি অংশ কেটে নিয়ে এসে ঐ ব্লক হওয়া হৃদ-ধমনীর আগে এবং পরে যুক্ত করে একটি বাইপাস তৈরি করেন। এই বাইপাসের মধ্য দিয়ে রক্ত অবাধে প্রবাহিত হয়ে হৃদপেশীগুলিতে পৌঁছাতে পারে।
হার্ট বাইপাস সার্জারি আবার করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (সি এ বি জি ) নামেও পরিচিত। সি-এ-ডি বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ এর মূল কারণ হল ধমনীর অভ্যন্তরের ব্যাস কমে যাওয়া। সি-এ-ডি এর অন্য একটি রুপ হল ইশ্চেমিক হার্ট ডিজিজ (আই-এইচ-ডি)। বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল ধমনীর এন্ডোথেলিয়ামের নিচে জমা হতে থাকে। ফলে ধমনীর গহ্বরের ব্যাস কমে যায়। এর ফলে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
সাধারনত শারীরিক পরিশ্রম করার সময় যদি বুকে ব্যাথা অনুভূত হয় অর্থাৎ যদি ইশ্চিমিক পেইন হয় তখন প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। কিছু নন ইনভেসিভ পরীক্ষার দ্বারা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবু নির্ধারণ করেন যে রোগীর করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি দরকার আছে কিনা।
কিন্তু অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে, যখন রোগী প্রচন্ড বুকে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন, তখন যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত হৃদপেশিগুলিতে রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করার দরকার হয়ে পরে।। ডাক্তারবাবুরা ওষুধ দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের চেষ্টা করেন। প্রধানত রক্ত কে যথা সম্ভব তরল রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই ধরনের নন-সারজিকাল বা পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনসান (পি সি আই) কাজ না করলে তখন দ্রুত সি-এ-বি-জি (বাইপাস সার্জারী) করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
কি ধরনের বাইপাস সার্জারী করানোর দরকার সেটা নির্ভর করে রোগীর করোনারি আর্টারিতে কতগুলি ব্লকেজ আছে তার ওপর।
হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারীর ফলে একাধিক দীর্ঘস্থায়ী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যেমন -
সার্জারীর পদ্ধতি-গত পার্থক্যের জন্য হার্ট বাইপাস সার্জারী কিম্বা সি-এ-বি-জি এর বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ হয়ে থাকে। যেমন-
হার্ট বাইপাস সার্জারী করার আগে সমস্ত রুটিন চেক-আপ করে নেওয়া হয়, যেমন -
এছাড়াও দেখে নেওয়া হয় পায়ে ভেরিকোজের সমস্যা আছে কিনা। বাহুতে যাতে রক্ত সরবরাহের সমস্যা না হয় সেজন্য অ্যালেন টেস্ট করে নেওয়া হয়। এরপর অ্যাঞ্জিওগ্রাফের মাধ্যমে কোন্ সার্জারী উপযুক্ত হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই সার্জারীটি করতে মোটামুটি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা মতো সময় লাগে। তবে রোগী বিশেষে কিছু সময়ের হেরফের হতে পারে।
অপারেশনের পর রোগীকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (আই সি ইউ) তে নিয়ে যাওয়া হয়। যদি কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয় তাহলে চারদিন পর্যন্ত আই-সি-ইউতে রাখা হয়। আর্টারিতে ফাইব্রিলেশন রোধ করার জন্য বিটা ব্লকার ব্যবহার করা হয়। এই সময় গ্রাফটিং ফেলিওর আটকানোর জন্য উচ্চ মাত্রায় অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।
হার্টে বাইপাস সার্জারীর সময় বা পরবর্তী পর্যায়ে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন -
হার্ট বাইপাস সার্জারীর পরে যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে সেগুলি হল -
ধমনীতে ফ্যাট জমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায় বেশি তেল এবং ফ্যাট যুক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। চিনি এবং মিষ্টি-জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম,কায়িক পরিশ্রম করা দরকার। এতে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমেতে পারে না। এছাড়া অ্যাঞ্জিওগ্রাফির উপর ভিত্তি করে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মত চিকিৎসা করা যেতে পারে।
হার্ট বাইপাস সার্জারীর খরচ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। হাসপাতাল ভেদে এবং রোগীর অবস্থা বিশেষে আনুমানিক ২৫০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।