Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp
বাইপাস সার্জারী কি ? । Heart Bypass Surgery in Bengali

Home > Blogs > বাইপাস সার্জারী কি ? । Heart Bypass Surgery in Bengali

বাইপাস সার্জারী কি ? । Heart Bypass Surgery in Bengali

Cardiac Surgery | by Dr. Manoj Kumar Daga | Published on 19/05/2023


Table of Contents

বাইপাস শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সকলেই পরিচিত। এর অর্থ শহরের ভিতরে মূল রাস্তার যানজট এড়াতে শহরের বাইরে দিয়ে রাস্তা বানিয়ে শহরের দুই প্রান্তকে জুড়ে দেওয়া। ফলে যান জট কমার সাথে সাথে গাড়ির গতিও বেড়ে যায়। হার্টের ক্ষেত্রে বাইপাস সার্জারীও অনেকটা সেইরকমই। আসুন আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি সম্মন্ধে বিশদে জানার চেষ্টা করি।

হার্ট বাইপাস সার্জারী কি ?

হৃদপিন্ড হল মানবদেহের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা পাম্পের মত আমাদের সারা দেহে রক্ত সরবরাহ করে। বাড়িতে জলের পাম্প যেমন একদিকে জলের উ ৎসের সাথে এবং অন্যদিকে জল বিতরণ-কারী নলের সাথে যুক্ত থাকে, ঠিক তেমনি আমাদের হৃদপিন্ড শিরা এবং ধমনীর (রক্তবাহ) সাথে যুক্ত থাকে। ধমনী বা আর্টারি সারা দেহে অক্সিজেন-যুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। যে ধমনী হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ করে তা হৃদ-ধমনী বা করোনারো আর্টারী নামে পরিচিত। 

যখন হৃদ-ধমনী বা করোনারী আর্টারী কোনো কারণে ব্লক হয়ে যায় বা অবরুদ্ধ হয়ে পরে তখন হৃদপিন্ডের পেশীগুলোতে রক্তপ্রবাহের পরিমাণ কমে যায়। এতে নানা শারীরিক জটিলতার সৃষ্টি হয়। রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। 

তাই হার্ট সার্জেনরা শরীরের অন্য কোনো স্থান থেকে সুস্থ ধমনীর একটি অংশ কেটে নিয়ে এসে ঐ ব্লক হওয়া হৃদ-ধমনীর আগে এবং পরে যুক্ত করে একটি বাইপাস তৈরি করেন। এই বাইপাসের মধ্য দিয়ে রক্ত অবাধে প্রবাহিত হয়ে হৃদপেশীগুলিতে পৌঁছাতে পারে।

হার্ট বাইপাস সার্জারীর কারণ কি?

হার্ট বাইপাস সার্জারি আবার করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফটিং (সি এ বি জি ) নামেও পরিচিত। সি-এ-ডি বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ এর মূল কারণ হল ধমনীর অভ্যন্তরের ব্যাস কমে যাওয়া। সি-এ-ডি এর অন্য একটি রুপ হল ইশ্চেমিক হার্ট ডিজিজ (আই-এইচ-ডি)। বেশি তেলযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল ধমনীর এন্ডোথেলিয়ামের নিচে জমা হতে থাকে। ফলে ধমনীর গহ্বরের ব্যাস কমে যায়। এর ফলে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে সি.এ.বি.জি করানোর প্রয়োজন হতে পারে?

সাধারণত, শারীরিক পরিশ্রমের সময় যদি বুকে ব্যথা অনুভূত হয়, অর্থাৎ ইস্কেমিক ব্যথা, তবে প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা করা যেতে পারে। কিছু অ-আক্রমণাত্মক পরীক্ষার মাধ্যমে, কার্ডিওলজিস্ট রোগীর করোনারি এনজিওগ্রাফি প্রয়োজন কিনা তা নির্ধারণ করে।

কিন্তু অ্যাকিউট করোনারি সিন্ড্রোমের ক্ষেত্রে, যখন রোগী প্রচন্ড বুকে ব্যাথা নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন, তখন যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত হৃদপেশিগুলিতে রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা করার দরকার হয়ে পরে।। ডাক্তারবাবুরা ওষুধ দিয়ে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের চেষ্টা করেন। প্রধানত রক্ত কে যথা সম্ভব তরল রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এই ধরনের নন-সারজিকাল বা পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেনসান (পি সি আই) কাজ না করলে তখন দ্রুত সি-এ-বি-জি (বাইপাস সার্জারী) করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

ব্লকেজের সংখ্যা অনুসারে হার্ট বাইপাস সার্জারীর প্রকারভেদ

কি ধরনের বাইপাস সার্জারী করানোর দরকার সেটা নির্ভর করে রোগীর করোনারি আর্টারিতে কতগুলি ব্লকেজ আছে তার ওপর। 

  • যদি একটিমাত্র আর্টারি ব্লক থাকে তাহলে সিঙ্গেল বাইপাস সার্জারীর প্রয়োজন। 
  • দুটি আর্টারি ব্লকের ক্ষেত্রে ডাবল বাইপাস সার্জারীর। 
  • তিনটি আর্টারি ব্লকেজে ট্রিপল বাইপাস গ্রাফট। 
  • চারটি ব্লকেজের জন্য টেট্রা বাইপাস সার্জারীর প্রয়োজন।
  • যদি পাঁচটি হৃদ-ধমনীতেই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে কুইন্টিপল বাইপাস সার্জারীর করা হয়ে থাকে।

হার্ট বাইপাস সার্জারীর সুবিধা

হৃদযন্ত্রে বাইপাস সার্জারীর ফলে একাধিক দীর্ঘস্থায়ী সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যেমন - 

  • হার্ট বাইপাস সার্জারীর পর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর অ্যানজাইনা (বুকে ব্যাথা) প্রায় সেরে যায়।
  • এটি অন্যান্য গুরুতর হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে দেয়।
  • হৃদপিন্ডের নানা অংশে রক্ত চলাচল প্রায় স্বাভাবিক করে তোলে।
  • রোগী সাধারণ কিছু বিধি নিষেধ পালন করলে অনায়াসে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন।

বাইপাস সার্জারীর রকমফের

সার্জারীর পদ্ধতি-গত পার্থক্যের জন্য হার্ট বাইপাস সার্জারী কিম্বা সি-এ-বি-জি এর বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ হয়ে থাকে। যেমন- 

  • মিনিমালি ইনভেসিভ হার্ট সার্জারী - সার্জেন এই ক্ষেত্রে রোগীর বুকের খাঁচা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত না করে সামান্য ছেদ করে হার্ট বাইপাস সার্জারী করে থাকেন।বর্তমানে এই পদ্ধতিটি খুব প্রচলিত হয়েছে। 
  • অন-পাম্প সার্জারী - এই ক্ষেত্রে ডাক্তারবাবু বক্ষগহ্বর সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করেন এবং হার্ট-লাঙ মেশিনের সাহায্যে সার্জারীর সময় সারা দেহে কৃত্রিমভাবে রক্ত সরবরাহ বজায় রাখেন।
  • অফ-পাম্প সার্জারী - অফ-পাম্প সার্জারীর ক্ষেত্রে হৃদপিন্ড চলমান অবস্থায় থাকাকালীন সার্জেন অস্ত্রোপচার করেন।এক্ষেত্রে হার্ট-লাঙ মেশিনের দরকার পরে না। এটিকে ‘বিটিং হার্ট সার্জারী’ ও বলা হয়।

সার্জারীর আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা

হার্ট বাইপাস সার্জারী করার আগে সমস্ত রুটিন চেক-আপ করে নেওয়া হয়, যেমন - 

  • ই সি জি
  • চেষ্ট এক্স-রে 
  • লিভার এবং কিডনির ফাংশন টেস্ট ইত্যাদি 

এছাড়াও দেখে নেওয়া হয় পায়ে ভেরিকোজের সমস্যা আছে কিনা। বাহুতে যাতে রক্ত সরবরাহের সমস্যা না হয় সেজন্য অ্যালেন টেস্ট করে নেওয়া হয়। এরপর অ্যাঞ্জিওগ্রাফের মাধ্যমে কোন্ সার্জারী উপযুক্ত হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বাইপাস সার্জারীর জন্য প্রস্তুতি 

  • অস্ত্রোপচারের দুই সপ্তাহ আগে থেকে রোগীকে অ্যান্টিকোয়াগুলেট জাতীয় ওষুধগুলি (যা রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না) খাওয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়। এটা করা হয় অস্ত্রোপচারের সময় এবং তার পরবর্তীকালে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য।
  • অপারেশনের আগের দিন রাত থেকে রোগীকে খাদ্য পানীয় গ্রহণের পরিমান কমিয়ে দিতে বা প্রায় বন্ধ করে দিতে হয়। শুধু ওষুধ খাওয়ার জন্য খুব সামান্য পরিমাণ জল পানের পরামর্শ দেওয়া হয়।

হার্ট বাইপাস অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি

  1. প্রথমে অ্যানেসথেসিস্ট রোগীকে অজ্ঞান করেন। এরপর সার্জেন বুকের মাঝ বরাবর একটা ১০ ইঞ্চির মত ছেদ করেন। তারপর ব্রেস্টবোনটাকে (বুকের পাঁজর) কাটা হয়। ফলে হৃদপিন্ড উন্মুক্ত হয়ে যায়। ধমনীগুলো পরিষ্কার দেখতে পাওয়া যায়।
  2. গ্রাফটিং করার জন্য শিরা বা ধমনী দুটোই ব্যবহৃত হয়। তবে সি-এ-বি-জি এর ক্ষেত্রে সাধারণত ধমনী বাছা হয়। কারণ ধমনীর কার্যকারিতা শিরার থেকে বেশি হয়। এক্ষেত্রে লিমা (লেফট ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারি) এবং রিমা (রাইট ইন্টারনাল ম্যামারি আর্টারি) ব্যবহার করতে পারেন। হার্ট বাইপাস সার্জারীর ক্ষেত্রে পায়ের সাপেনশ শিরার ব্যবহার বহুল প্রচলিত।
  3. গ্রাফটিং জন্য উপযুক্ত ধমনী বাছার পর হৃদযন্ত্রের আবরণী কলা পেরিকার্ডিয়াম উন্মুক্ত করা হয়। এরপর ধমনী বা শিরাটি সঠিক জায়গায় লাগানো হয়। তারপর কাটা উন্মুক্ত অংশগুলিকে ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেওয়া হয়। 
  4. অন-পাম্প সার্জারীর ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে মেশিন কে বন্ধ করে হৃদযন্ত্রে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হয়।

এই সার্জারীটি করতে মোটামুটি ৪ থেকে ৬ ঘন্টা মতো সময় লাগে। তবে রোগী বিশেষে কিছু সময়ের হেরফের হতে পারে।

অস্ত্রোপচারের পরবর্তী সময়ের যত্ন

অপারেশনের পর রোগীকে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে (আই সি ইউ) তে নিয়ে যাওয়া হয়। যদি কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয় তাহলে চারদিন পর্যন্ত আই-সি-ইউতে রাখা হয়। আর্টারিতে ফাইব্রিলেশন রোধ করার জন্য বিটা ব্লকার ব্যবহার করা হয়। এই সময় গ্রাফটিং ফেলিওর আটকানোর জন্য উচ্চ মাত্রায় অ্যাস্পিরিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা হয় ।

অস্ত্রোপচারের সময় ঝুঁকি এবং জটিলতা

হার্টে বাইপাস সার্জারীর সময় বা পরবর্তী পর্যায়ে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন -
 

হার্ট বাইপাস সার্জারীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

হার্ট বাইপাস সার্জারীর পরে যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে সেগুলি হল - 

  • যেখানে গ্রাফটিং করা হয়েছে সেখানে পিন ফোটার মত যন্ত্রনার অনুভূতি।
  • মানসিক দোলাচল।
  • কোষ্ঠকাঠিন্যতা।
  •  খিদে কমে যাওয়া।
  • ক্লান্তি।
  • পেশী ও পিঠে ব্যথা।
  • ঘুমে ব্যাঘাত। 

 

ঘন ঘন জিজ্ঞাসাকৃত প্রশ্নসমূহ

 

হার্ট বাইপাস সার্জারী কি এড়ানো যেতে পারে?

ধমনীতে ফ্যাট জমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায় বেশি তেল এবং ফ্যাট যুক্ত খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া। চিনি এবং মিষ্টি-জাতীয় খাবার কম খাওয়া উচিত। নিয়মিত ব্যায়াম,কায়িক পরিশ্রম করা দরকার। এতে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমেতে পারে না। এছাড়া অ্যাঞ্জিওগ্রাফির উপর ভিত্তি করে ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মত চিকিৎসা করা যেতে পারে।

ভারতে হার্ট বাইপাস সার্জারীর খরচ কি রকম?

হার্ট বাইপাস সার্জারীর খরচ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। হাসপাতাল ভেদে এবং রোগীর অবস্থা বিশেষে আনুমানিক ২৫০০০০ টাকা থেকে ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

হার্ট বাইপাস সার্জারীর পরবর্তীকালে জীবন যাপন কেমন হওয়া উচিত?

  • সার্জারীর পর হৃদপিন্ডে রক্ত সরবরাহ প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেলেও কিছু ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই বেশ কিছুদিন পরিশ্রমসাধ্য কাজ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়। 
  • রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। 
  • ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মত সঠিক খাদ্যাভাস ও সময় মতো ওষুধপত্র খেতে হবে। 
  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা এবং মানসিক দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলতে হবে।