Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp
উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি? জেনে নিন এর ৫টি প্রতিকার

Home > Blogs > উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি? জেনে নিন এর ৫টি প্রতিকার

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ কি? জেনে নিন এর ৫টি প্রতিকার

Cardiology | by Dr. Shuvo Dutta | Published on 19/05/2023


উচ্চ রক্তচাপের অবস্থাকে হাইপারটেনশন বলা হয়। আধুনিক জীবনযাত্রায় এই রোগ খুবই ব্যাপক হারে দেখা যাছে। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ-এর উপসর্গগুলি স্বাভাবিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে নিজেদের অজান্তেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পড়েন। তাই উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ উপসর্গ আর প্রতিকারের উপায় সম্মন্ধে আমাদের সকলের জানা উচিৎ। জীবনযাত্রার কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারি।

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণ ও চিকিৎসা

উচ্চ রক্তচাপ-এর সমস্যায় রক্তের প্রবাহের অতিরিক্ত চাপ ধমনীর দেওয়ালে পরে। শুরুতে উচ্চ রক্তচাপের সেরকম কোনো বিশেষ লক্ষণ থাকে না। তাই অনেকে জানতে পারেন না যে তাদের এই সমস্যা আছে। উচ্চ রক্তচাপ মাপবার এবং জানবার একমাত্র উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ পরিমাপ করা হয় দুটি সংখ্যা দ্বারা। 

  • একটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্ত চাপ ‘120 / 80 mmHg’ - এর আশপাশে থাকে। 
  • 120/80 mmHg এর প্রথম সংখ্যাটি, '120' সিস্টোলিক রক্তচাপকে বোঝায়। সিস্টোলিক রক্তচাপ হৃৎপিণ্ডের স্পন্দনের সময় ধমনীর দেওয়ালে রক্তের চাপকে বোঝায়। 
  • দ্বিতীয় সংখ্যা, অর্থাৎ '80' হল ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ। হৃৎপিণ্ডের পরপর দুই টি স্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে ধমনীর দেওয়ালে রক্তচাপ কে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে।

শারীরবৃত্তীয় কারনে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই একজনের ক্ষেত্রে যা কম বা বেশী, অন্যজনের ক্ষেত্রে সেটি স্বাভাবিক হতে পারে। 90/60 mmHg থেকে 120/80 mmHg - এই সীমার মধ্যে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়।

সাধারণ ভাবে কারোর উচ্চ রক্তচাপ আছে এটা বলা যায় যখন - 

  • একজন পূর্ণবয়স্কের রক্তচাপের মাত্রা 140/90 mmHg এর বেশী থাকে। 
  • একজন আশি বছর বা তার বেশি বয়স্কের রক্তচাপ 150/90 mmHg এর বেশি থাকে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণে শারীরিক রোগের ঝুঁকি

উচ্চ রক্তচাপ দেহের সুস্থ অবস্থাকে ব্যাহত করে। এর ফলে হার্ট, ব্রেন এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রক্তের সরবরাহ ঠিকমতো না হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় এওর্টা বা ধমনীর রোগ (Peripheral Artery Disease) এবং ডিমেনশিয়াও হতে পারে।

হৃদরোগ বা হার্ট ডিজিজ

অতিরিক্ত রক্তচাপ দেহের ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে ধমনীর নমনীয়তা কম করে। যার ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত এবং রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ প্রভাবিত হয়। ফলস্বরূপ বিভিন্ন হৃদরোগের যেমন বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ব্রেন স্ট্রোক

উচ্চ রক্তচাপের কারণে আমাদের মস্তিস্কে রক্ত ও রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যেতে পারে। এতে ব্রেনে ব্লকেজ বা ধমনী বার্স্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। ব্রেন স্ট্রোকের ফলে মস্তিস্ক কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক রকম শারীরিক অক্ষমতা দেখা যায়। যেমন: 

  • কথা না বলতে পারা। 
  • হাঁটা চলায় অসুবিধা।
  • স্বাভাবিক কার্যকলাপে অসুবিধা। 
  • অবশেষে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ

রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বৃদ্ধি পাবার অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনো কারণকে দায়ী করা যায় না। তবু কিছু কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। সেই কারণ গুলি হলো:

  • খাবারে অতিরিক্ত পরিমাণে লবণ গ্রহণ করা।
  • অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় মদ্যপান করা।
  • শরীরের অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি।
  • ধূমপান।
  • পর্যাপ্ত শাকসবজি এবং ফলমূল না খাওয়া।
  • রাত্রে পর্যাপ্ত না ঘুমোনো (৬-৮ ঘন্টা)।
  • অতিরিক্ত চা , কফি বা ক্যাফিন-যুক্ত পানীয় সেবন।
  • পরিবারের সদস্য যেমন মা, বাবা, ভাই, বোনের উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা থাকা।
  • যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা।
  • বয়স ষাট থেকে পঁয়ষট্টির উর্ধ্বে থাকা।

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা 

উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত হবার পর সাধারনত চিকিৎসক রোগীর বয়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা পর্যালোচনা করে যথাযথ ওষুধ খাবার নির্দেশ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। কখনোই নিজে থেকে ওষুধের ধরন বা মাত্রা কমানো বা বাড়ানো উচিত নয়। এতে শরীরে বিরূপ প্রভাব পরতে পারে। 

উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নাম হলো :

  • লিসিনোপ্রিল 
  • বিভিন্ন ধরণের ডাই-ইউরেটিক 
  • এ-সি-ই ইনহিবিটর 
  • বিটা ব্লকার 
  • আল্ফা ব্লকার

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পাঁচটি সহজ উপায় 

উচ্চ রক্তচাপ এবং এর সঙ্গে জড়িত আরো অন্যান্য জটিল সমস্যা এড়িয়ে চলতে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। এখানে এমন পাঁচটি উপায় আলোচনা করা হলো। 

  1. নিজের দৈহিক ওজনকে বয়স এবং উচ্চতা অনুসারে সঠিক ভাবে বজায় রাখুন। প্রতিদিন ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট শরীরচর্চা করুন। হাঁটা, কার্ডিও ব্যায়াম, যোগব্যায়াম নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে করলে আমাদের শরীর ও হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে।
  2. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে প্রতিদিন ৫ গ্রামের চেয়ে বেশি লবন খাওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন বাজার-চলতি চিপস, ফাস্ট ফুড, নোনতা খাবার, বিস্কুটে অতিরিক্ত পরিমানে লবন মেশান থাকে। তাই এই ধরনের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন হওয়া আবশ্যক।
  3. পটাসিয়ামের মাত্রা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন রকম ফল ও সবজি খেতে হবে। পটাসিয়াম-যুক্ত ফল হলো কলা, রাঙা আলু, বাদাম, আভোকাডো ইত্যাদি। এছাড়া দই, স্যামন মাছ, টুনা প্রভৃতি খাবার নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় রাখা উচিৎ।
  4. ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করুন। 
  5. মদ্যপান খুব সীমিত মাত্রায় করা উচিত। গবেষণায় জানা গেছে যে অ্যালকোহল ১৬ শতাংশ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়।

উপসংহার 

শুরুতে উচ্চ রক্তচাপের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষন বা উপসর্গ থাকতে নাও পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ মাপা দরকার। উচ্চ রক্তচাপ-এর সমস্যা ধরা পরলে নিয়মানুবর্তিতা মেনে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হবে। তার সাথে প্রয়োজন শরীর চর্চা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিজেকে সুস্থ রাখুন। রক্তচাপের সমস্যা থেকে বাঁচুন।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নঃ

প্রঃ রক্তচাপ আচমকা বেড়ে গেলে কি হয়?

অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমের ফলে রক্তচাপ আচমকা বেড়ে যেতে পারে। বিশ্রাম নিলে ধীরে ধীরে তা কমেও যায়। তবে স্বাভাবিক অবস্থাতেও নিয়মিত রক্তচাপ বেড়ে থাকলে নানান শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হার্ট, ব্রেইন, কিডনি, পরিপাক তন্ত্র ব্যাহত হয়। সময় মতো সতর্কতা না নিলে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলউর ও ব্রেন স্ট্রোকেও মতো প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। তাই গুরুতর ক্ষতি হবার আগে রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা এবং সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

প্রঃ রক্তচাপ পরিমাপের অংশ কি কি?

রক্তচাপ পরিমাপের দুটি অংশ। প্রথম অংশ হলো যখন হার্ট স্পন্দন হয় এবং দ্বিতীয় অংশ যখন হার্ট বিশ্রামে থাকে (দু টি বিটের মধ্যের সময়)।

প্রঃ উচ্চ রক্তচাপে কি ধরনের খাদ্য নিষেধাজ্ঞা আছে?

  • রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট এর তৈরি খাবার।
  • চিনি, ময়দা, সাদা ভাত, পাউরুটি, বার্গার, প্যাটিস, ইত্যাদি। খাবার ত্যাগ করুন। 
  • ধূমপান।
  • মদ্যপান। 

মিলেট জাতীয় শস্য বেশি করে খান। বেশি ফাইবার-যুক্ত খাবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।