উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হলো রক্তচাপ 140/90 mmHg-এর বেশি হওয়া অবস্থা। প্রাথমিকভাবে উপসর্গ নাও থাকতে পারে, তবে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা, বুক ধড়ফড় ও ক্লান্তি সাধারণ লক্ষণ। সুষম খাদ্য, ব্যায়াম, লবণ কমানো ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেলে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
উচ্চ রক্তচাপের অবস্থাকে হাইপারটেনশন বলা হয়। আধুনিক জীবনযাত্রায় এই রোগ খুবই ব্যাপক হারে দেখা যাছে। অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ-এর উপসর্গগুলি স্বাভাবিক ভাবে বুঝে উঠতে পারেন না। ফলে নিজেদের অজান্তেই বিপজ্জনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে পড়েন। তাই উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ উপসর্গ আর প্রতিকারের উপায় সম্মন্ধে আমাদের সকলের জানা উচিৎ। জীবনযাত্রার কিছু স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন করলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা স্বাভাবিক ভাবে জীবনযাপন করতে পারি।
উচ্চ রক্তচাপ-এর সমস্যায় রক্তের প্রবাহের অতিরিক্ত চাপ ধমনীর দেওয়ালে পরে। শুরুতে উচ্চ রক্তচাপের সেরকম কোনো বিশেষ লক্ষণ থাকে না। তাই অনেকে জানতে পারেন না যে তাদের এই সমস্যা আছে। উচ্চ রক্তচাপ মাপবার এবং জানবার একমাত্র উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ পরিমাপ করা হয় দুটি সংখ্যা দ্বারা।
শারীরবৃত্তীয় কারনে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের রক্তচাপের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তাই একজনের ক্ষেত্রে যা কম বা বেশী, অন্যজনের ক্ষেত্রে সেটি স্বাভাবিক হতে পারে। 90/60 mmHg থেকে 120/80 mmHg - এই সীমার মধ্যে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়।
সাধারণ ভাবে কারোর উচ্চ রক্তচাপ আছে এটা বলা যায় যখন -
উচ্চ রক্তচাপ দেহের সুস্থ অবস্থাকে ব্যাহত করে। এর ফলে হার্ট, ব্রেন এবং দেহের অন্যান্য অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রক্তের সরবরাহ ঠিকমতো না হলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া পায়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ায় এওর্টা বা ধমনীর রোগ (Peripheral Artery Disease) এবং ডিমেনশিয়াও হতে পারে।
অতিরিক্ত রক্তচাপ দেহের ধমনীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে ধমনীর নমনীয়তা কম করে। যার ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্ত এবং রক্তে অক্সিজেনের সরবরাহ প্রভাবিত হয়। ফলস্বরূপ বিভিন্ন হৃদরোগের যেমন বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিওর-এর ঝুঁকি বেড়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে আমাদের মস্তিস্কে রক্ত ও রক্তে অক্সিজেনের প্রবাহ কমে যেতে পারে। এতে ব্রেনে ব্লকেজ বা ধমনী বার্স্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যা ব্রেন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। ব্রেন স্ট্রোকের ফলে মস্তিস্ক কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক রকম শারীরিক অক্ষমতা দেখা যায়। যেমন:
রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রা থেকে বৃদ্ধি পাবার অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনো কারণকে দায়ী করা যায় না। তবু কিছু কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় বা উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। সেই কারণ গুলি হলো:
উচ্চ রক্তচাপ সনাক্ত হবার পর সাধারনত চিকিৎসক রোগীর বয়স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা পর্যালোচনা করে যথাযথ ওষুধ খাবার নির্দেশ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। কখনোই নিজে থেকে ওষুধের ধরন বা মাত্রা কমানো বা বাড়ানো উচিত নয়। এতে শরীরে বিরূপ প্রভাব পরতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধের নাম হলো :
উচ্চ রক্তচাপ এবং এর সঙ্গে জড়িত আরো অন্যান্য জটিল সমস্যা এড়িয়ে চলতে জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। এখানে এমন পাঁচটি উপায় আলোচনা করা হলো।
প্রাথমিকভাবে উচ্চ রক্তচাপের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ বা উপসর্গ নাও থাকতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা প্রয়োজন। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ধরা পড়লে কার্ডিওলজি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। এর পাশাপাশি আপনাকে ব্যায়াম করতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিজেকে সুস্থ রাখুন। রক্তচাপের সমস্যা এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত কায়িক পরিশ্রমের ফলে রক্তচাপ আচমকা বেড়ে যেতে পারে। বিশ্রাম নিলে ধীরে ধীরে তা কমেও যায়। তবে স্বাভাবিক অবস্থাতেও নিয়মিত রক্তচাপ বেড়ে থাকলে নানান শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হার্ট, ব্রেইন, কিডনি, পরিপাক তন্ত্র ব্যাহত হয়। সময় মতো সতর্কতা না নিলে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলউর ও ব্রেন স্ট্রোকের মতো প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। তাই গুরুতর ক্ষতি হবার আগে রক্তচাপ নিয়মিত পরিমাপ করা এবং সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
রক্তচাপ পরিমাপের দুটি অংশ। প্রথম অংশ হলো যখন হার্ট স্পন্দন হয় এবং দ্বিতীয় অংশ যখন হার্ট বিশ্রামে থাকে (দু টি বিটের মধ্যের সময়)।
মিলেট জাতীয় শস্য বেশি করে খান। বেশি ফাইবার-যুক্ত খাবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দেখা, শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় এবং ক্লান্তি অন্তর্ভুক্ত। অনেক সময় কোনো লক্ষণ ছাড়াই রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, স্থূলতা, অনিয়মিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ, ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, এবং বংশগত কারণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
হ্যাঁ, দীর্ঘদিন নিয়ন্ত্রণে না থাকলে উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি ক্ষতি এবং চোখের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
Written and Verified by:
Dr Shuvo Dutta is a full time Senior Cardiologist in BM Birla Heart Research Centre. He has completed his MD from Calcutta National Medical College in Kolkata and is a Fellow of the Royal College of Physicians in the UK and Fellow of American College of Cardiology.
Similar Cardiology Blogs
Book Your Appointment TODAY
© 2024 BMB Kolkata. All Rights Reserved.