Cardiology | by Dr. Tarun Praharaj | Published on 19/05/2023
মহিলাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে বহু প্রকারের সমস্যার কথা উঠে আসে। তার মধ্যে পি সি ও ডি, পি সি ও এস, পিরিয়ডস, ও প্রসব সংক্রান্ত বিষয় তো রয়েছেই। তারপরেই যে গুরুতর রোগগুলি রয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো হৃদরোগ।
মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকি ও হৃদরোগের উপসর্গ গুলি, পুরুষদের থেকে আলাদা হতে পারে। তাই সচেতন হতে এবং সমস্যা থেকে বাঁচতে এগুলো জানা প্রয়োজন।
মহিলাদের অনেক প্রকার হৃদরোগের সমস্যা দেখা যায় যেমন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, এবং হার্ট ফেইলিওর ইত্যাদি। শুধু মাত্র উপসর্গ নয়, কারণগুলি বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলে মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই নিবন্ধে আমরা এমনই কিছু কারণ সম্পর্কে জানবো।
সংখ্যাতত্ত্ব অনুযায়ী পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে প্রথম হার্ট অ্যাটাক থেকে বাঁচার হার কম। এর কারণ এমনটাও হতে পারে যে, পুরুষদের থেকে মহিলাদের রোগের লক্ষণ ভিন্ন তাই সঠিকভাবে সনাক্ত করা যায় না আর পরিণতি চরম হয়ে যায়।
আমাদের মধ্যে অনেকের মনে হয় যে হার্ট অ্যাটাক হঠাৎ করে হয়। কিন্তু এমনটা আসলে হয় না। 2013 এর এক অধ্যয়নে জানা গেছে যে, হার্ট অ্যাটাকের আগে লক্ষণ এক মাস আগের থেকে জানা যায়। কিন্তু এতো যতসামান্য হয় যে অনেকে উপেক্ষা করেন।
১) মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের হার্ট অ্যাটাকের স্বাভাবিক লক্ষণ হলো বুকে ব্যথা এবং অস্বস্তি। এছাড়া বুকের পেশীতে খিঁচুনি, ব্যথা, ও সংকোচন অনুভব করা। যদিও মহিলাদের এরকম কোনো উপসর্গ ছাড়াই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
২) হার্ট অ্যাটাক হবার আগে ভীষণ ক্লান্তি অনুভূত হয়। এযনকি নিত্যদিনের কাজ করতেও ক্লান্তি অনুভব হয়।
৩) দুর্বলতা , মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের আগের লক্ষণ। মাথা ঘোরা, হতাশা, অথবা হালকা ভাব অনুভব করা।
৪) শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা অথবা শ্বাস প্রশ্বাসের সময় বুকে ব্যথা হওয়া।
৫) শীত অনুভূত হওয়া এবং ঘেমে গিয়ে চ্যাটচেটে হওয়া।
৬) পিঠের ওপর অংশের ব্যথাও হার্ট অ্যাটাকের সংকেত হতে পারে। এছাড়া ঝিনঝিন অনুভব করা ও চাপ অনুভব করা।
৭) গলা ও চিবুকের ব্যাথাও হৃদরোগের সংকেত হতে পারে। অনেক সময় বুকে ব্যথা না হয়ে চিবুকে ও গলায় ব্যথা হয়।
মহিলা এবং পুরুষ উভয়ের হার্ট অ্যাটাকের কারণ একই হয়। কিন্তু কিছু আলাদা কারণ আছে যা শুধু মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন: উচ্চ রক্তচাপের কারণে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাক তথা অন্যান্য হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
হাই কোলেস্টেরল: হরমোনের ভারসাম্য ঠিক না থাকলে কোলেস্টেরল বেড়ে যায় যা হৃদরোগের কারণ হয়। এছাড়া মেনোপজের কারণে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। ফলে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ে এবং পরিণতি হিসেবে হৃদরোগ দেখা যায়।
ধূমপান: মহিলাদের ক্ষেত্রে ধূমপান করলে হৃদরোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
এছাড়া জীবনধারণের প্রকৃতি, জেনেটিক্স, কিছু ধরণের ওষুধ, ইনফেকশন এইসব কারণেও মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাট্যাক হয়।
হার্ট অ্যাট্যাকের পর প্রতি মুহূর্তে হার্টের কলা ও কোষের মৃত্যু ঘটে। তাই হার্ট অ্যাট্যাকের পর যত দ্রুত সম্ভব এর চিকিৎসা করানো উচিৎ। এই দ্রুত চিকিৎসার দ্বারাই রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ সংরক্ষিত হতে পারে। বাইরে থেকে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আংশিক ও সম্পূর্ণ হার্ট ব্লকেজের ওপর নির্ভর করে আলাদা আলাদা চিকিৎসা পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।
আপনার কার্ডিওলজি ডাক্তার হার্ট অ্যাটাক নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এই পরীক্ষাগুলি সাধারণত জরুরী কক্ষে করা হয়। একজন চিকিত্সক প্রাথমিকভাবে নাড়ি পরীক্ষা করেন, রক্তচাপ পরিমাপ করেন এবং আরও চিকিত্সা নিশ্চিত করতে রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ পরীক্ষা করেন।
পরবর্তী পদক্ষেপে চিকিৎসক আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে থাকেন। যেমন :
রক্ত পরীক্ষা: হার্ট এট্যাক হয়ে থাকলে হৃৎপিণ্ডের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর প্রভাবে রক্তের কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে থাকে। তাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেও রোগনিদান করা সম্ভব।
ইলেক্টোকার্ডিওগ্রাম বা ই সি জি: হার্ট অ্যাট্যাক হবার লক্ষণ দেখার পর সর্বপ্রথম এই পরীক্ষা করা হয়।
ইকোকার্ডিওগ্রাম: আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে ইকোকার্ডিওগ্রামে, হৃৎপিণ্ডের বাইরের এবং ভেতরের ছবি করা হয়।
এছাড়া এনজিওগ্রাম, হার্ট কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি, এবং হার্ট এম আর এই, প্রভৃতি পরীক্ষার দ্বারা হার্ট অ্যাট্যাক নির্ণয় করা হয়।
অ্যাসপিরিন: অ্যাসপিরিন রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে মন্থর করে। ফলে সংকীর্ণ ধমনীর মধ্যে দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে।
থ্রোম্বোলিটিক বা ফিব্রিনোলিটিক: এই ওষুধগুলি রক্তের জমাটকে ভাঙতে সাহায্য করে অথবা হার্ট অ্যাট্যাক জনিত ব্লকেজকে সরিয়ে রক্তপ্রবাহ সঞ্চালন করে।
ব্লাড থিনার: ব্লাড থিনার ওষুধের দ্বারা রক্ত জমাট বাঁধার হারকে কমানো হয়।
নাইট্রোগ্লিস্যারীন: এই ওষুধটি রক্তকে হৃৎপিণ্ডে সঞ্চালিত করতে সাহায্য করে। হঠাৎ বুকে ব্যাথা হলেও এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
উপরোক্ত ওষুধ ছাড়াও ব্যাথা কমানোর জন্য মর্ফিন, বিটা ব্লকারস, স্ট্রেস কমানোর জন্য এ সি ই ইনহিবিটর্স, স্টাটিনস নামক ওষুধের ব্যবহার করা হয়।
অনেক সময় হার্ট অ্যাট্যাকের রোগীর সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে করোনারি এনজিওপ্লাস্টি, স্টেন্টিং, এবং করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারির মতো সার্জারি করা হতে পারে।
করোনারি এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্টিং: এই পদ্ধতিতে ধমনীর মধ্যে একটি টিউব ঢুকিয়ে ব্লকেজ সরানো হয়।
করোনারি আর্টারি বাইপাস সার্জারি: এটি একটি ওপেন হার্ট সার্জারি। এই ক্ষেত্রে দেহের অন্য অংশের সুস্থ রক্তনালী নিয়ে রক্ত সরবরাহের পথ তৈরি করা হয়। অনেকসময় ইটা এমার্জেন্সিতে অথবা কিছুদিন বাদে করা হতে পারে।
মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকি-এর বিভিন্ন কারণ আছে। এবং এই সব কারণের জন্যে অনেক ধরণের হৃদরোগ দেখা যায়। তার মধ্যে বিশেষ কিছু হৃদরোগ মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
যেমন: করোনারি আর্টারি রোগ,অ্যারিথমিয়া, হার্ট ফেইলিওর, ইত্যাদি।
করোনারি আর্টারি রোগ: মহিলাদের মধ্যে বাড়ছে হৃদ্রোগের ঝুঁকিের মধ্যে অন্যতম হলো করোনারি আর্টারি ডিসিস। ধমনী গাত্রে প্লাক জমে হৃৎপিণ্ডে বা হার্ট-এ রক্তের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। শুধুমাত্র হৃৎপিণ্ডই নয় , অন্যান্য শারীরিক অঙ্গেও রক্তের সরবরাহ কমে। ফলে এই রোগ হয়। মহিলাদের মেনোপজ-এর পরে দেহে হরমোনের পরিবর্তন হয় ফলে এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
অ্যারিথমিয়া: এই রোগে হৃৎস্পন্দন খুব ধীরে অথবা খুব দ্রুত হয়। কিংবা হৃৎস্পন্দনের লয় ঠিক থাকে না।
হার্ট ফেইলিওর: উক্ত অবস্থায় হৃৎপিণ্ড দুর্বল হয়ে যায় এবং সারা শরীরে প্রয়োজনমাফিক রক্ত পাম্প করতে পারেনা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে হৃৎস্পন্দন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে সুস্থ ভাবে এবং হৃদরোগের বা হার্ট অ্যাট্যাকের ঝুঁকিবিহীন জীবন যাপন করা যেতে পারে।
এর জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং সেই নিয়মগুলি হলো :
আপনার দুর্বল হৃদয়ের কিছু লক্ষণ আপনাকে জানিয়ে দিতে পারে যে আপনার হার্ট দুর্বল।
কিছু ক্ষেত্রে, ব্যথা বা অস্বস্তি অন্যান্য কারণে মহিলাদের বুক ব্যাথা হতে পারে। এই সমস্যাগুলি হলো, যেমন বুকজ্বালা, রিফ্লাক্স, ফুসফুস-সম্পর্কিত সমস্যা বা হৃদযন্ত্রকে প্রভাবিত করে এমন অন্য কোনো সমস্যা। যদিও বুকে ব্যথার কিছু সম্ভাব্য কারণ কম গুরুতর, তবে একজন মহিলার অবিলম্বে সাহায্য নেওয়া উচিত কারণ এই উপসর্গটি একটি মেডিকেল জরুরি অবস্থা নির্দেশ করতে পারে।
হার্ট অ্যাট্যাকের ৪ টি নীরব লক্ষণ হলো :