পেটে ব্যথা একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত শারীরিক সমস্যা, যার পেছনে গ্যাস, বদহজম, সংক্রমণ, আলসার বা গলব্লাডারের মতো অঙ্গের ব্যাধি থাকতে পারে। সঠিক স্থান ও উপসর্গ বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
খেতে কার না ভালো লাগে? আর বিয়ে বাড়ি, যে কোন অনুষ্ঠান বাড়ি বা রেস্টুরেন্টের খাওয়া হলে তো কথাই নেই। পেট পুরে খেতে আমরা সকলেই পছন্দ করি। কিন্তু যদি হয় পেটে ব্যাথা? তাহলে খাবার সব আনন্দই মাটি। পেটের সমস্যা জীবনের সমস্ত স্ফূর্তি নষ্ট করেত পারে। তাই পেট কে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী। সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে সঙ্গে হজমের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল পেটে ব্যাথা।
পেটে ব্যাথা আপাত চোখে বিশেষ কোন রোগ না হলেও, এর পিছনে অনেক কারন থাকতে পারে। পেটে ব্যাথার কারণ জানতে হলে আগে আমাদের পেট সম্মন্ধে সঠিক ধারনা থাকা দরকার।
পেট হল পাঁজর এবং শ্রোণির (পেলভিস) মধ্যবর্তী জায়গা। শরীরের এই অংশে পরিপাক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবস্থান করে, যেমন -
এই সকল অঙ্গ আমাদের খাবার গ্রহন, হজম এবং পরিপক্ত খাবারের অবশেষ শরীর থেকে নিষ্কাশনে সাহায্য করে। পেটে ব্যথা পরিপাক তন্ত্রের কোন একটি বা একাধিক অঙ্গে সমস্যা জানান দিতে পারে। সবার আগে আমাদের জানতে হবে পেটের ঠিক কোন জায়গায় ব্যাথা হচ্ছে। উপরের পেটে, তলপেটে, নাভির চারপাশে, নাভির নীচে অথবা নাভির উপরে?
তার ওপর বিচার করে চিকিৎসকরা পেট ব্যাথার সঠিক কারণ নির্ণয় করেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক কারন নির্ণয়ের জন্য একাধিক মেডিক্যাল টেস্টেরও দরকার পরে।
পেট ব্যাথার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে ডাক্তারদের মতামত অনুসারে কয়েকটি সাধারণ কারন হোল।
আমাদের পেটে খাদ্য পরিপাক করার সময় স্বাভাবিক ভাবেই উপজাত হিসাবে গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস শরীর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে নির্গত হয়ে যায়। আঁশযুক্ত (fibrous food) খাবার, ডাল, শাগসবজি ইত্যাদি হজম করার সময় বেশি গ্যাস উৎপন্ন হয়। আমরা সবাই আজকাল বাইরের গুরুপাক খাদ্যাভাসে অভ্যাস্ত হয়ে পরছি। এই ধরনের খাবার আমাদের পরিপাক তন্ত্রে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন করে। শরীরে গ্যাস নির্গমনের থেকে বেশি হারে গ্যাস উৎপন্ন হলে পরিপাক তন্ত্রের মধ্যে সেই গ্যাস জমতে থাকে। এতে পরিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়, পেটে যন্ত্রণাও হতে পারে।
প্রথম প্রথম গ্যাসের ব্যাথা বেশিক্ষন স্থায়ী থাকে না। ধীরে ধীরে কমে যায়। দীর্ঘ দিনের অযত্নে হজম যন্ত্রে স্থায়ী ক্ষতি হলে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে এই সমস্যা চিরসাথী হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক, সময়োচিত চিকিৎসার সাথে সাথে খাদ্যাভাসের ওপরে নজর রাখা দরকার।
আজকাল ছোট বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রবীণ মানুষেরা তেল, মশলা, চর্বি যুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকেন। এই জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে সাধারণত অম্বলের সমস্যা দেখা যায়। অম্বলের সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল -
যখন এই ধরনের লক্ষণ দেখা দেয়, তখন আমরা সাধারণত নিজেরা অ্যান্টাসিড গ্রহণ করি না। এটি তাত্ক্ষণিক সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। কিন্তু যখন এই ধরনের সমস্যা বারবার ঘটতে শুরু করে, তখন তাদের দমন করা বা উপেক্ষা করা খুবই বিপজ্জনক। পরিপাকতন্ত্রে নিয়মিত অতিরিক্ত অ্যাসিড পাকস্থলী এবং হজম সংক্রান্ত অন্যান্য অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি করে। অতএব, অম্বল এবং অম্বলের মতো ব্যথার চিকিত্সার জন্য, একজনকে অবিলম্বে একজন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
আমাদের পরিপাক তন্ত্রের খাদ্য গ্রহন এবং হজম করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতার চেয়ে বেশি খাবার বা গুরুপাক খাবার খেলে বদহজম হতে পারে। এতে আমাদের শরীর খাবারের পুষ্টি গুণ গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ শরীরে অস্বস্তি, পেটে যন্ত্রণা, বমিভাব, মাথাঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। খাবার খাওয়ার ধরন ঠিক না করলে এই বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। সেই সাথে দরকার নিয়মিত শরীর চর্চা। পরিপাক তন্ত্রের কোন অংশে কোন রোগ (ইনফেক্সান) হলেও বদহজম হতে পারে। সঠিক কারন অনুমানের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী। যদি আপনি নিয়মিত বদহজমের শিকার হন তাহলে অতি অবশ্যই ডাক্তার দেখান।
আমাদের পরিপাক তন্ত্রে লেকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া এবং বিফিডো ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্ত বাইরে থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পরিপাক তন্ত্রে প্রবেশ করলে সংক্রমন সৃষ্টি করে। এতে আমাদের স্বাভাবিক হজম ক্ষমতা ব্যাহত হয়। সংক্রমন তীব্র মাত্রায় পৌঁছলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন -
এই ধরনের রোগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়টিক এবং অন্যান্য ওষুধ খাওয়া উচিত। বারংবার পাতলা পায়খানা এবং বমি হলে শরীরে জলে জোগান কমে যায়। সেই ক্ষেত্রে রোগী কে নুন-চিনির জল (ORS) নিয়ম করে খাওয়ান ভীষণ জরুরী।
ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও অন্যান্য জীবাণু (যেমন ভাইরাস, ছত্রাক) এবং পরজীবী পেটে সংক্রমন তৈরি করতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রেও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা জরুরী।
পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্তের গায়ে ক্ষত কে আলসার বলে। বিভিন্ন কারনে এইরকম ক্ষতের জন্ম হয়, যেমন
আলসারের সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল -
এই ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায় রোগ ধরা পরলে এবং চিকিৎসা শুরু হলে আলসারের সঠিক নিরাময় সম্ভব।
গলব্লাডার একটি ছোট্ট নাসপাতি-র আকারের অঙ্গ যেটি আমাদের পেটের ডান দিকে লিভারের নিচে অবস্থান করে। এর থেকে ক্ষুদ্রান্তে পিত্ত নিঃসৃত হয় যা হজমে সাহায্য করে। পিত্ত লিভার থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত কলেস্তরেলকে (cholesterol) দ্রবীভূত করে। কিন্তু পুরোপুরি দ্রবীভূত না করা গেলে অতিরিক্ত কলেস্তরেল গলব্লাডারের মধ্যে ক্রিস্টাল আকারে জমতে থাকে। ধীরে ধীরে এই ক্রিস্টাল শক্ত পাথরের আকার নেয়। পিত্তথলি তে পাথর হলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন-
গল ব্লাডারে পাথর বিভিন্ন কারনে হতে পারে। এদের মধ্যে প্রধান কারন হোল অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি করে পিত্তথলি থেকে পাথর বের করে দেওয়া। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে এর থেকে গলব্লাডারের ক্যান্সারও হতে পারে।
তলপেটে ব্যাথার কিছু বিশেষ কারন থাকতে পারে, যেমন -
লিভারের নানান সমস্যার কারণে উপরের পেটে ব্যাথা হয়ে থাকে, যেমন
পেটে ব্যথা গুরুতর বা সৌম্য কারণে হতে পারে। কিন্তু নিয়মিত ব্যথা উপেক্ষা করা উচিত নয়। দীর্ঘস্থায়ী পেট ব্যথার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে দেরি করা আপনার শরীরের বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার নিকটস্থ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন এবং সঠিক চিকিৎসা নিন।
খালি পেটে পেট ব্যথা সাধারণত অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরির কারণে হয়। দীর্ঘ সময় না খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেড়ে যায়, যেটা অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রাইটিস সৃষ্টি করে এবং ব্যথার কারণ হতে পারে।
হ্যাঁ, অনিয়মিত বা একেবারে কমবার খাওয়ার ফলে বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। এটা হজমে চাপ ফেলে এবং পেটের ব্যথা, ফাঁপা ভাব বা টান সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘ সময় বসে থাকলে অন্ত্রের স্বাভাবিক নড়াচড়া কমে যায়, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এই কারণে পেট ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভূত হয়।
যদি পেট ব্যথার সঙ্গে জ্বর, বমি, রক্তযুক্ত মল বা ওজন কমার মত উপসর্গ থাকে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এটি গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে।
হ্যাঁ, মানসিক চাপ হজম প্রক্রিয়া ধীর করে এবংকোর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নির্গমনের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল সমস্যা যেমন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে
Written and Verified by:
Consultant - GI & Hepato-Biliary Surgeon Exp: 10 Yr
Gastro Sciences
Dr. Ajay Mandal is one of the leading specialist in area of GI Oncology, Hepato-Biliary & Pancreatic Disease treatment. He is based primarily at The Calcutta Medical Research Institute, Kolkata with more than 10 years of rich experience in dealing with various aspects of digestive system specially in liver & Pancreatic Disorders.
Dr. Mandal has been trained in various parts of India and abroad( S. Korea) and is one of the few certified trained Gastro surgeon in Kolkata. He has performed hundreds of complicated GI & Hepato-Biliary cancer surgery. Apart from GI Oncosurgery, laparoscopic surgery is regular event for him and now even cancer surgery is being performed by him laparoscopically.
Dr. Mandal not only performs surgery for cancer patients but also provides holistic approach for further treatment once he /she gets recovered from surgery. His team includes Medical Oncologist, Medical Gastroenterologist and Intervention Radiologist, all of them work together in many occasions and as on required to provide the best available treatment for their patient.
Similar Gastro Sciences Blogs
Book Your Appointment TODAY
© 2024 CMRI Kolkata. All Rights Reserved.