Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp Lab report/login
পেট ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

Home > Blogs > পেট ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

পেট ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া প্রতিকার

Gastro Sciences | by Dr. Ajay Mandal | Published on 08/05/2023



ভুমিকা

খেতে কার না ভালো লাগে? আর বিয়ে বাড়ি, যে কোন অনুষ্ঠান বাড়ি বা রেস্টুরেন্টের খাওয়া হলে তো কথাই নেই। পেট পুরে খেতে আমরা সকলেই পছন্দ করি। কিন্তু যদি হয় পেটে ব্যাথা? তাহলে খাবার সব আনন্দই মাটি। পেটের সমস্যা জীবনের সমস্ত স্ফূর্তি নষ্ট করেত পারে। তাই পেট কে সুস্থ রাখা অত্যন্ত জরুরী। সুস্বাদু খাবারের সঙ্গে সঙ্গে হজমের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তাই আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হল পেটে ব্যাথা।

পেট কাকে বলে ব্যাথা?

পেটে ব্যাথা আপাত চোখে বিশেষ কোন রোগ না হলেও, এর পিছনে অনেক কারন থাকতে পারে। পেটে ব্যাথার কারণ জানতে হলে আগে আমাদের পেট সম্মন্ধে সঠিক ধারনা থাকা দরকার। 

পেট হল পাঁজর এবং শ্রোণির (পেলভিস) মধ্যবর্তী জায়গা। শরীরের এই অংশে পরিপাক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অবস্থান করে, যেমন - 

  • পাকস্থলী
  • লিভার বা যকৃত
  • গলব্লাডার
  • অগ্নাশয়
  • ক্ষুদ্রান্ত্র
  • বৃহদন্ত

এই সকল অঙ্গ আমাদের খাবার গ্রহন, হজম এবং পরিপক্ত খাবারের অবশেষ শরীর থেকে নিষ্কাশনে সাহায্য করে। পেটে ব্যথা পরিপাক তন্ত্রের কোন একটি বা একাধিক অঙ্গে সমস্যা জানান দিতে পারে। সবার আগে আমাদের জানতে হবে পেটের ঠিক কোন জায়গায় ব্যাথা হচ্ছে। উপরের পেটে, তলপেটে, নাভির চারপাশে, নাভির নীচে অথবা নাভির উপরে? 

তার ওপর বিচার করে চিকিৎসকরা পেট ব্যাথার সঠিক কারণ নির্ণয় করেন। অনেক ক্ষেত্রে সঠিক কারন নির্ণয়ের জন্য একাধিক মেডিক্যাল টেস্টেরও দরকার পরে।

পেট ব্যাথার সাধারন কারণ

পেট ব্যাথার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে ডাক্তারদের মতামত অনুসারে কয়েকটি সাধারণ কারন হোল। 

  • গ্যাসের ব্যাথা
  • অম্বলের ব্যাথা
  • বদহজমের কারনে ব্যাথা
  • ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের কারনে ব্যাথা
  • ভাইরাসজনিত সংক্রমনের কারনে পেট ব্যাথা
  • আলসার
  • গলব্লাডার
  • ডাইভার্টিকুলাইটিস

গ্যাসের কারণে ব্যাথা

আমাদের পেটে খাদ্য পরিপাক করার সময় স্বাভাবিক ভাবেই উপজাত হিসাবে গ্যাস তৈরি হয়। এই গ্যাস শরীর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে নির্গত হয়ে যায়। আঁশযুক্ত (fibrous food) খাবার, ডাল, শাগসবজি ইত্যাদি হজম করার সময় বেশি গ্যাস উৎপন্ন হয়। আমরা সবাই আজকাল বাইরের গুরুপাক খাদ্যাভাসে অভ্যাস্ত হয়ে পরছি। এই ধরনের খাবার আমাদের পরিপাক তন্ত্রে অত্যধিক গ্যাস উৎপন্ন করে। শরীরে গ্যাস নির্গমনের থেকে বেশি হারে গ্যাস উৎপন্ন হলে পরিপাক তন্ত্রের মধ্যে সেই গ্যাস জমতে থাকে। এতে পরিপাক ক্রিয়া ব্যাহত হয়, পেটে যন্ত্রণাও হতে পারে। 

প্রথম প্রথম গ্যাসের ব্যাথা বেশিক্ষন স্থায়ী থাকে না। ধীরে ধীরে কমে যায়। দীর্ঘ দিনের অযত্নে হজম যন্ত্রে স্থায়ী ক্ষতি হলে গ্যাসের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে এই সমস্যা চিরসাথী হয়ে উঠতে পারে। তাই সময় থাকতে চিকিৎসা শুরু করা উচিত। 

এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সঠিক, সময়োচিত চিকিৎসার সাথে সাথে খাদ্যাভাসের ওপরে নজর রাখা দরকার।

অম্বলের কারনে পেট ব্যাথা 

আজকাল ছোট বাচ্চা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রবীণ মানুষেরা তেল, মশলা, চর্বি যুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকেন। এই জাতীয় খাবার খাওয়ার পরে সাধারণত অম্বলের সমস্যা দেখা যায়। অম্বলের সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল - 

  • পেট ও বুকের মধ্যে জ্বালার অনুভূতি। 
  • পেট ভার হয়ে থাকা। 
  • মুখ টক হয়ে যাওয়া। 
  • টক ঢেঁকুর ওঠা। 

এরকম উপসর্গ দেখা গেলে আমরা সাধারণত নিজে থেকে অ্যান্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেয়েনি। এতে সমস্যা থেকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু এরকম সমস্যা প্রায়ই হতে থাকলে সেটা চেপে রাখা বা অগ্রাহ্য করা অত্যন্ত বিপদজনক। পরিপাক যন্ত্রে অ্যাসিডের (অম্ল) নিয়মিত আধিক্য হলে, তা পাকস্থলী এবং হজমের সাথে যুক্ত অন্যান্য অঙ্গের চিরস্থায়ী ক্ষতি করে। তাই অম্বল এবং অম্বল-জাত ব্যাথার সুরাহার জন্য অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।

বদহজমের ফলে সমস্যা 

আমাদের পরিপাক তন্ত্রের খাদ্য গ্রহন এবং হজম করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা থাকে। সেই ক্ষমতার চেয়ে বেশি খাবার বা গুরুপাক খাবার খেলে বদহজম হতে পারে। এতে আমাদের শরীর খাবারের পুষ্টি গুণ গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়। ফলস্বরূপ শরীরে অস্বস্তি, পেটে যন্ত্রণা, বমিভাব, মাথাঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়। খাবার খাওয়ার ধরন ঠিক না করলে এই বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি নেই। সেই সাথে দরকার নিয়মিত শরীর চর্চা। পরিপাক তন্ত্রের কোন অংশে কোন রোগ (ইনফেক্সান) হলেও বদহজম হতে পারে। সঠিক কারন অনুমানের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ জরুরী। যদি আপনি নিয়মিত বদহজমের শিকার হন তাহলে অতি অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

ব্যাকটেরিয়া সংক্রামনে পেটে ব্যাথা 

আমাদের পরিপাক তন্ত্রে লেকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া এবং বিফিডো ব্যাকটেরিয়া থাকে। এরা আমাদের খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্ত বাইরে থেকে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া পরিপাক তন্ত্রে প্রবেশ করলে সংক্রমন সৃষ্টি করে। এতে আমাদের স্বাভাবিক হজম ক্ষমতা ব্যাহত হয়। সংক্রমন তীব্র মাত্রায় পৌঁছলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন - 

  • পাতলা পায়খানা 
  • পেটে যন্ত্রণা ও খিঁচুনি
  • বমিভাব 
  • বমি 
  • জ্বর

এই ধরনের রোগে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়টিক এবং অন্যান্য ওষুধ খাওয়া উচিত। বারংবার পাতলা পায়খানা এবং বমি হলে শরীরে জলে জোগান কমে যায়। সেই ক্ষেত্রে রোগী কে নুন-চিনির জল (ORS) নিয়ম করে খাওয়ান ভীষণ জরুরী। 

ব্যাকটেরিয়া ছাড়াও অন্যান্য জীবাণু (যেমন ভাইরাস, ছত্রাক) এবং পরজীবী পেটে সংক্রমন তৈরি করতে পারে। এই সকল ক্ষেত্রেও দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা জরুরী।

আলসার

পাকস্থলি এবং ক্ষুদ্রান্তের গায়ে ক্ষত কে আলসার বলে। বিভিন্ন কারনে এইরকম ক্ষতের জন্ম হয়, যেমন

  • দীর্ঘ সময় পেট খালি রাখা। 
  • পাকস্থলী ব্যাকটেরিয়ার (Helicobacter pylori) সংক্রমন। 
  • দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রদাহরোধী ওষুধের ব্যবহার। 
  • নিয়মিত তৈলাক্ত, মশলা যুক্ত খাবার খাওয়া 
  • নিয়মিত মানসিক দুশ্চিন্তা 

আলসারের সাধারণ উপসর্গ গুলি হোল - 

  • পেটের উপরের দিকে মাঝে মাঝে ব্যাথা।
  • পেটের উপরে ও পেটের মাঝখানে জ্বালা অনুভব করা। 
  • পেট কামড়ানো। 
  • নিয়মিত টক ঢেঁকুর ওঠা। 

এই ধরণের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রাথমিক পর্যায় রোগ ধরা পরলে এবং চিকিৎসা শুরু হলে আলসারের সঠিক নিরাময় সম্ভব।

গলব্লাডার

গলব্লাডার একটি ছোট্ট নাসপাতি-র আকারের অঙ্গ যেটি আমাদের পেটের ডান দিকে লিভারের নিচে অবস্থান করে। এর থেকে ক্ষুদ্রান্তে পিত্ত নিঃসৃত হয় যা হজমে সাহায্য করে। পিত্ত লিভার থেকে নিঃসৃত অতিরিক্ত কলেস্তরেলকে (cholesterol) দ্রবীভূত করে। কিন্তু পুরোপুরি দ্রবীভূত না করা গেলে অতিরিক্ত কলেস্তরেল গলব্লাডারের মধ্যে ক্রিস্টাল আকারে জমতে থাকে। ধীরে ধীরে এই ক্রিস্টাল শক্ত পাথরের আকার নেয়। পিত্তথলি তে পাথর হলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে, যেমন - 

  • পেটের উপরের দিকে ডান পাশে যন্ত্রণা 
  • আচমকা পেটের মাঝখানে তীব্র যন্ত্রণা 
  • ব্যাক পেইন 
  • বমিভাব 

গল ব্লাডারে পাথর বিভিন্ন কারনে হতে পারে। এদের মধ্যে প্রধান কারন হোল অতিরিক্ত তেল মশলা যুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস। এই রোগের একমাত্র চিকিৎসা সার্জারি করে পিত্তথলি থেকে পাথর বের করে দেওয়া। সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না হলে এর থেকে গলব্লাডারের ক্যান্সারও হতে পারে।

তলপেটের ব্যাথার কারন

তলপেটে ব্যাথার কিছু বিশেষ কারন থাকতে পারে, যেমন - 

  • মহিলাদের মাসিকের জন্য ক্র্যাম্প।
  • ডিম্বস্ফোটনের ব্যাথা।
  • মুত্রনালীতে সংক্রমণের জন্য তলপেটে ব্যাথা।
  • লিভার ক্যান্সারের ব্যাথা। 
  • ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম।
  • ডিসপেপ্সিয়া।
  • অন্ত্রে প্রদাহ জনিত সমস্যা।
  • কোলন ক্যান্সার।
  • পেরিটোনাইটিস।
  • মাসান্টেরিক লিম্ফডেনাইটিস।
  • অন্ত্রের ইস্কেওমিক সিন্ড্রোম। 
  • হার্নিয়া। 
  • কিডনিতে পাথর।
  • ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রতিবন্ধকতা। 
  • অন্ত্রের ক্যান্সার 
  • এন্ড্রোমেট্রিওসিস
  • ওভারিয়ান সিস্ট
  • পেলভিক প্রদাহজনিত রোগ
  • একটোপিক গর্ভাবস্থা
  • ওভারিয়ান ক্যান্সার
  • জরায়ু ক্যান্সার

উপরের পেটে ব্যথার কারণ

লিভারের নানান সমস্যার কারণে উপরের পেটে ব্যাথা হয়ে থাকে, যেমন 

  • হেপাটাইটিস 
  • পিত্তথলির নানান সমস্যা
  • পিত্তথলির প্রদাহ
  • পিত্তথলির ক্যান্সার

উপসংহার

পেটের ব্যাথা মারাত্মক বা কোন ক্ষতিকারক কারন থেকে না হতেও পারে। কিন্তু নিয়মিত ব্যাথা হলে সেটা অবহেলা করা অনুচিত। দীর্ঘস্থায়ী পেটে ব্যাথায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দেরি হলে, আপনার শরীরের বড়সড় ক্ষতি হতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি আপনার কাছাকাছি ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করুন।