Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp Lab report/login
বাহ্হমোরয়েড : কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

Home > Blogs > বাহ্হমোরয়েড : কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

বাহ্হমোরয়েড : কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

Gastro Sciences | by Dr. Ajay Mandal | Published on 18/04/2023



ভুমিকাঃ-

পাইলস্ বা হেমোরয়ডের (বাংলায় অর্শ্বরোগ) অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই অজানা নয়। বহু মানুষ, বিশেষত মধ্য বয়সে, এই শারীরিক জতিলতার শিকার হন। অনেক মহিলা সাধারনত তাদের প্রেগনেন্সির সময় অর্শ্বরোগে ভোগেন। অনেকের ক্ষেত্রে প্রেগনেন্সির পর এই সমস্যা মিটে যায়। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। পায়খানা করার সময় মলদ্বারে যন্ত্রণা, ব্যথা এবং রক্তপাতের আশঙ্কা বহু মানুষের কাছে আতঙ্ক। পৃথিবীতে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে প্রায় তিনজন অর্শ্বরোগের সমস্যা ভোগ করেন। হেমোরয়েড শব্দটি গ্রীক শব্দ "হেমোরয়েডস" থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হল রক্ত ​​নিঃসরণ করার জন্য দায়ী একটি শিরা। সঠিক জ্ঞান এবং কিছু সাধারণ নিয়মানুবর্তীতা পাইলস থেকে দীর্ঘকালীন মুক্তি দিতে পারে। আসুন আমরা এই রোগ সম্মন্ধে সচেতনতা গড়ে তুলি।

পাইলস, ববাশির বা অর্শ্বরোগ কি?

আমাদের নিম্ন মলদ্বারের শিরা ফুলে যাওয়া এবং তৎসম্মন্ধিত বিভিন্ন শারীরিক জতিলতা কে পাইলস বা অর্শ্বরোগ বলে। শিরার এই ফুলে যাওয়া মলদ্বার বা পায়ুর ভিতরে (ইন্টারনাল ) এবং বাইরে (এক্সটারনাল) - দুই জায়গাতেই হতে পারে। 

পাইলসের লক্ষণ:-

অর্শ্বের স্থান এবং তীব্রতার উপর নির্ভর করে পাইলস বা হেমোরয়েডের লক্ষণ এবং উপসর্গ বিভিন্ন রকমের হতে পারে।

বাহ্যিক বা এক্সটারনাল হেমোরয়েডসের লক্ষণ - 

এই ক্ষেত্রে পায়ুর শিরা মলদ্বারের চারপাশে ত্বকের নীচে ফুলে ওঠে। সম্ভব্য লক্ষণ এবং উপসর্গ হল - 

  • পায়ু অঞ্চলে চুলকানি বা জ্বালা।
  • পায়ুদ্বারে ব্যথা বা অস্বস্তি। 
  • মলদ্বারের চারপাশে ফোলাভাব।
  • পায়খানা করার সময় রক্তপাত।
  • মাটিতে বা শক্ত জায়গায় বসতে গেলে চাপ লেগে ব্যাথা। 

অভ্যন্তরীণ বা ইন্টারনাল হেমোরয়েডসের লক্ষণ- 

অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড মলদ্বারের ভিতরে বা বৃহদন্ত্রের নিম্ন ভাগে শিরা ফুলে ওঠার ফলে হয়। এটা বাইরে থেকে দেখা যায় না, অনেক সময় অনুভব করাও যায় না। কিন্তু মলত্যাগের সময় চাপ পরলে অর্শ্বের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েডের সাধারণ লক্ষণ গুলি হল - 

  • মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত। 
  • টয়লেট টিস্যুতে বা মলে অল্প পরিমাণে উজ্জ্বল লাল রক্ত। 
  • মলদ্বার খোলার সময় ব্যথা এবং জ্বালা।
  • মাটি তে বা শক্ত জায়গায় বসতে গেলে চাপ লেগে ব্যাথা।

পাইলসের ফোলার মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তীব্র যন্ত্রণা দায়ক থ্রম্বোজড হেমোরয়েডস তৈরি হতে পারে। এর লক্ষণ গুলি হল - 

  • তীব্র ব্যথা ও ফোলা
  • ফুলে যাওয়া অংশে প্রদাহ এবং সংক্রমন 
  • মলদ্বারের কাছে সবসময় একটি শক্ত পিণ্ডের অনুভূতি 

পাইলসের কারন

বিভিন্ন কারণে পাইলস হতে পারে, যেমন - 

  • নিয়মিত অতি তরল বা শক্ত মলত্যাগ। 
  • খাবারে ফাইবার বা তন্তুজাতীয় খাদ্যগুণ কম থাকা।
  • লিভারের রোগ যা রক্তচাপ বৃদ্ধি করে।
  • পারিবারিক পাইলস্ রোগের ইতিহাস।
  • দীর্ঘ সময় ধরে ডায়রিয়া হওয়া।
  • নিয়মিত ভারী বস্তু তুলবার সময় পায়ুদ্বারে অতিরিক্ত চাপ। 
  • রেকটাল ক্যান্সার।
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি।
  • দীর্ঘ দিনের অবিরাম কাশি, হাঁচি এবং বমি। 
  • চাপ দিয়ে মলত্যাগের অভ্যাস। 
  • এপিসিওটমি ছেদ (যনি পথ এবং পায়ুর মধ্যবর্তী অংশে) যা প্রসবের সময় করা হতে পারে। 
  • মলদ্বার দিয়ে যৌন সংসর্গের অভ্যাস। 
  • আলসারেটিভ কোলাইটিস এবং ক্রোনের রোগের মতো প্রদাহজনক অন্ত্রের রোগ ।
  • মলদ্বার সম্পর্কিত অস্ত্রোপচার।

পাইলসের চিকিত্সা

পাইলসের সর্বোত্তম চিকিৎসা হল শল্যচিকিৎসা। অর্থাৎ হেমোরয়েড অংশ টিকে কেটে বাদ দেওয়া। অস্ত্রপচারের আগে এবং পরে কিছু নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়। অস্ত্রপচার ছাড়া ডাক্তাররা পেইন কিলার এবং রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করার ওষুধ দেন। 

পাইলস্ হলে যে নিয়মগুলি অনুসরণ করতে হয় - 

  • প্রচুর জল খান। 
  • মল নরম রাখতে ফাইবার বা তন্তু সমৃদ্ধ খাবার খান যেমন ওটস, শাগ সবজি ইত্যাদি। 
  • মলত্যাগের পর নরম টয়লেট পেপার দিয়ে পায়ুদ্বার হালকাভাবে মুছুন। 
  • পাইলস বেদনাদায়ক। যন্ত্রণা প্রশমনকারী ওষুধ যেমন অ্যাসিটামিনোফেন বা প্যারাসিটামল খান। 
  • চুলকানি এবং ব্যথা উপশম করতে, গরম জলে সিট’স বাথ নিতে পারেন। অর্থাৎ একটি পাত্রে ঈষদুষ্ণ জল ঢেলে তাতে পায়ু কিছুক্ষন ডুবিয়ে রাখুন।
  • যদি পাইলস মলদ্বার থেকে বেরিয়ে আসে, তাহলে নিজের আঙুল ব্যবহার করে এটিকে আলতো করে ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হয়। 
  • অস্বস্তি উপশম করতে পায়ু অঞ্চলে বরফের প্যাক দিয়ে কোল্ড কম্প্রেস করতে পারেন। 
  • পায়ু অঞ্চল শুকনো এবং পরিষ্কার রাখুন।
  • পাইলসের উপযোগী ব্যায়াম করুন। 
  • অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় গ্রহন নিয়ন্ত্রন করুন। 

পাইওলস প্রতিরোধ

ে অভ্যাসগুলি পাইলসের ঘটনা রোধ করতে পারে এবং রোগের তীব্রতা কমাতে পারে তা হল:

  • পর্যাপ্ত জল (6-8 গ্লাস জল) পান করা।
  • মলত্যাগের তাগিদ অনুভবের সাথে সাথে টয়লেটে যাওয়ার অনুশীলন করা।
  • নিয়মিত ব্যায়াম এবং ওজন হ্রাস (সঠিক BMI বজায় রাখা)। 
  • মলত্যাগের সময় চাপ দেয়া এড়িয়ে চলুন। এর জন্য মল নরম করার (স্টুল সফটনার) ওষুধ বা ইসবগুল ব্যবহার করা যেতে পারে। 
  • টয়লেটে দীর্ঘক্ষণ স্কোয়াট বা উবু হয়ে বসার ভঙ্গি এড়িয়ে চলুন। 

পাইলস থাকলে কি ধরণের খাবার খাবেন? 

  • লেগুম বা ডাল: প্রতিদিনের ডায়েটে পর্যাপ্ত ফাইবার-যুক্ত খাবার রাখুন। এতে আপনি পাইলসের সম্ভাবনা কমাতে পারেন। মূলত খাদ্য থেকে আমরা দুই ধরণের ফাইবার পেতে পারি - দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় তন্তু বা ফাইবার। দ্রবণীয় ফাইবার পরিপাকতন্ত্রে একটি জেল্ তৈরি করে যা আমাদের পরিপাক তন্ত্রে থাকা বন্ধু-ব্যাকটেরিয়া দের হজমের উপযোগী। অন্যদিকে, অদ্রবণীয় ফাইবার মলকে আয়তনে এবং পরিমানে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এই দুই ধরনের ফাইবার ডাল জাতীয় খাদ্যে (যেমন মটরশুটি, মসুর, মটর, সয়াবিন, চিনাবাদাম এবং ছোলা) প্রচুর পরিমানে থাকে।

 

  • ব্রকলির মতো ক্রুসিফেরাস সবজি: ফুলকপি, ব্রাসেল স্প্রাউটস, ব্রোকলি, বোকচয়, কেইল, বাঁধাকপি এবং মূলোর মতো সবজিগুলিতে প্রচুর পরিমাণে অদ্রবণীয় ফাইবার থাকে। এই ধরনের ক্রুসিফেরাস শাকসবজিতে গ্লুকোসিনোলেট নামক একটি উদ্ভিদ রাসায়নিকও থাকে যা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ারা সহজেই দ্বারা ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এতে মল ত্যাগের সুবিধা হয়। পাইলসের সম্ভাবনা কমে।
  • শিকড়-জাতীয় শাকসবজি:  শালগম, বীট, রুটাবাগাস, গাজর, মিষ্টি আলু এবং আলু। এগুলি আমাদের পেটকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পরিপূর্ণ রাখে এবং অত্যন্ত পুষ্টিকর। এছাড়াও, এগুলি অন্ত্র-বান্ধব ফাইবারে পূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, রান্না করা এবং ঠান্ডা সাদা আলুতে স্টার্চ থাকে যা পাচনতন্ত্র কে ভাল রাখে। 
  • গোটা শস্য: গোটা শস্য বীজাণু, তুষ এবং এন্ডোস্পার্ম ধরে রাখে। এগুলিতে ফাইবার থাকে। গোটা শস্য অদ্রবণীয় ফাইবারেও সমৃদ্ধ। ওটমিলে বিটা-গ্লুকান নামক একটি বিশেষ দ্রবণীয় ফাইবার রয়েছে, যা প্রো-বায়োটিকের কাজ করে। এতে আমাদের পেটের ভালো মাইক্রোবায়োম সুস্থ থাকে। 

যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে -

  • প্রক্রিয়াজাত মাংস
  • সাদা ময়দা 
  • দুগ্ধজাত পণ্য
  • লাল মাংস
  • ভাজা খাবার
  • স্ন্যাকস এবং নোনতা খাবার
  • মশলাদার খাবার
  • প্যাকেটজাত খাবার

উপসংহার

পাইলস বা অর্শ্বরোগ একমাত্র নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়েই প্রতিরোধ করা সম্ভব। যথাযথ খাদ্য ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস পাইলসের যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে পারে। যদি সমস্যা অত্যধিক বেড়ে যায় তাহলে অস্ত্রপচার একমাত্র উপায়। কিন্তু অনিয়ম করলে সফল অস্ত্রোপচারের পরেও সমস্যা ফিরে আসতে পারে। তাই ডাক্তার দেখান এবং তাদের পরামর্শ মেনে চলুন। সুস্থ থাকুন।