যক্ষ্মা (টিবি) রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা
Home >Blogs >যক্ষ্মা (টিবি) রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

যক্ষ্মা (টিবি) রোগের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা

Pulmonology | by Dr. Raja Dhar on 21/02/2024

Summary

টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগের কারণ একটি ব্যাকটেরিয়া, যার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে, কিন্তু টিবির ব্যাকটেরিয়া দেহের যে কোনও অঙ্গেই রোগ ছড়াতে পারে যার মধ্যে পড়ে কিডনি, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্ক। তবে যাদের দেহে টিবির ব্যাকটেরিয়া থাকে তারা সবাই অসুস্থ হয় না।

যদি ঠিকমতো চিকিৎসা না হয় তাহলে এই রোগের কারণে মৃত্যও হতে পারে। যদি টিবি রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসার বিষয়টি জানা থাকে তাহলে সেটা খুবই সহায়ক হয়। এই ব্লগে আমরা যক্ষা রোগ বা টিবির কারণ , লক্ষণ ও চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা করব।

টিউবারকিউলোসিস কি?

ইংরেজি ভাষায় টিবিকে টিউবারকিউলোসিস বলে। টিবি আসলে সংক্রামক রোগ যা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের অনেক রকম লক্ষণ দেখা যায়। সেগুলি এই ব্লগের মাধ্যমে আপনি সহজেই জানতে পারবেন। আগেই আমরা বলেছি যে, এই রোগ ছড়ায় একটি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে যার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। টিবি ছড়ানোর পিছনে আসল কারণ হল বাতাস। কাশি, হাঁচি কিংবা লালা মারফৎ টিবি একজনের থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের ফুসফুসের ক্ষতি করে। তবে এই রোগটি আমাদের দেহের সেই সব অংশের ক্ষতি করে যেখানে রক্ত ও অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি। সেকারণেই টিবি বেশি হয় ফুসফুসে। ফুসফুসের টিবিকে আবার পালমোনারি টিবিও বলা হয়।

কত ধরনের টিবি হতে পারে

একজন ব্যক্তির নানা ধরনের টিবি হতে পারে। যেমন

  • সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন টিবি:এই ধরনের টিবিতে শরীরে ব্যাকটেরিয়া নিষ্ক্রিয় আকারে থাকে। তখন প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে আমাদের শরীর এই ব্যাকটেরিয়াকে সক্রিয় হতে দেয় না। এই পরিস্থিতিতে টিবির কোনও লক্ষণও দেখা যায় না। তবে ভবিষ্যতে এই ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় হতে পারে।
  • সক্রিয় টিবি: এই ধরনের টিবিতে শরীরের মধ্যেই ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় এবং এই রোগের সব লক্ষণ শরীরে ফুটে ওঠে। এটা সংক্রামক ধরনের রোগ।
  • পালমোনারি টিবি: এই ধরনের টিবিকে রোগের প্রাথমিক ধাপ বলে ধরে নেওয়া যায়। এই ধরনের রোগ সরাসরি ফুসফুসে আক্রমণ করে এবং তার ফলে দীর্ঘ দিনের কাশির সমস্যা দেখা দেয়।
  • এক্সট্রা পালমোনারি টিবি:এই ধরনের টিবিতে রোগ ফুসফুস থেকে শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ফুসফুস থেকে সমস্যা হাড়ে, কিডনিতে কিংবা লিম্ফ নোডে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

টিবির লক্ষণ কি কি

টিবির ব্যাকটেরিয়া শরীরের কোন অংশে বাড়ছে তার ওপর টিবি রোগের লক্ষণগুলি নির্ভর করে। সাধারণভাবে এই রোগের লক্ষণগুলি আলাদা। তবে হাড়ের টিবির কিছু লক্ষণ গলার টিবির লক্ষণের চেয়ে আলাদা। টিবির ব্যাকটেরিয়া সাধারণত বেড়ে ওঠে ফুসফুসে (পালমোনারি টিবি)। টিবি হলে নীচের লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে:

  • কাশি হতে পারে এবং এই সমস্যা থাকতে পারে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি
  • বুকে ব্যথা
  • শ্লেষ্মা
  • দুর্বলতা কিংবা ক্লান্তি
  • ওজন কমতে পারে
    খিদে কমে যেতে পারে
  • ঠান্ডা লাগা ভাব থাকতে পারে
    জ্বর
  • রাতে ঘাম হতে পারে

অনেকে ভুল বোঝেন যে নারী ও পুরুষের মধ্যে যক্ষ্মার লক্ষণ আলাদা। না, মোটেও সেরকম নয়। যদি আপনার উপরে উল্লিখিত উপসর্গগুলির কোনটি থাকে, তাহলে আমরা আপনাকে অবিলম্বে একজন পালমোনোলজি ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করার পরামর্শ দিই।

কেন টিবি হয়?

ব্যাকটেরিয়ার কারণেই টিবি হয়। ঠান্ডা কিংবা ফ্লুয়ের মতো এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ছড়ায়। যাদের টিবি হয়েছে এমন লোকের সংস্পর্শে এলেই তবে কারো টিবি হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যদি আপনি এমন একজনের সঙ্গে হাঁটেন যার টিবি হয়েছে, এবং তিনি যদি মুখে চাপা না দিয়ে হাঁচেন, এবং হাঁচি থেকে বেরোনো ড্রপলেট আপনার মুখের কাছে এসে পড়ে, তাহলে আপনারও টিবি হতে পারে।


টিবির চিকিৎসা

কী ধরনের টিবি হয়েছে তার ওপর নির্ভর করবে চিকিৎসার ধরন। যদি আপনার সুপ্ত বা প্রচ্ছন্ন টিবি থাকে,তাহলে ব্যাকটেরিয়াকে মারার জন্য চিকিৎসক আপনাকে কিছু ওষুধ দিতে পারে যাতে সংক্রমণ সক্রিয় হয়ে উঠতে না পারে। আইসোনাইজড, রেফাপ্যানটিন বা রিফ্যামপিন সল্ট থেকে আলাদাভাবে কিংবা এগুলির মিশ্রণ থেকে তৈরি ওষুধ আপনাকে দেওয়া হতে পারে। এই ধরনের ওষুধগুলির নির্দিষ্ট একটা কোর্স আছে এবং সেই কোর্স শেষ করাটা বাধ্যতামূলক। যদি আপনার মনে হয় টিবির কোনও লক্ষণ আপনার দেহে সক্রিয় তাহলে তখনই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কীভাবে রোগের চিকিৎসা করা হবে সেই পরামর্শ চান।

এছাড়াও, চিকিৎসকেরা কয়েকটি ওষুধের মিশ্রণ দিতে পারেন। সাধারণত চিকিৎসকেরা এমন মিশ্রণের ওষুধ দেন যেগুলির নাম অ্যাটমসস্ফিয়ার, আইসোনাইজড, পাইরোজেনমাইড এবং রিফ্যামপিন। এই সব ওষুধের কোর্স চলতে পারে ৬ থেকে ১২ সপ্তাহ। একইসঙ্গে পালমোনারি ও এক্সট্রা পালমোনারি টিবির ক্ষেত্রে, ওষুধের কোর্স চলে আর একটু বেশি দিন।

যদি আপনার অন্য কোনও সংক্রমণ থেকে থাকে কিংবা যদি আপনি অন্য কোনও ওষুধ খান, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসককে সেকথা জানাতে হবে। তাছাড়া রোগী নিজে থেকে কোনও ওষুধের কোর্স বন্ধ করবেন না। যদি মাঝপথে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেন তাহলে ব্যাকটেরিয়া ফের সক্রিয় হবে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।

কীভাবে টিবি আটকানো যায়

টিবির চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে টিবি ঠেকানোটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। টিবি যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য নীচের পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে—

  • যদি আপনার প্রচ্ছন্ন টিবি থেকে থাকে, তাহলে ঠিক সময়ে সব ওষুধ খান যাতে ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় এবং সংক্রামক হতে না পারে এবং আপনি তাড়াতাড়ি সেরে ওঠেন।
  • যদি টিবি সক্রিয় থাকে তাহলে রোগীকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে তিনি অন্য লোকের সংস্পর্শে না আসেন। হাসার সময়, কাশি হলে কিংবা হাঁচি হলে মুখ ঢেকে রাখুন। যখন কারোর সঙ্গে দেখা করবেন তখন সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করুন।
  • যদি এমন একটা জায়গায় যান যেখানে অনেক লোকের টিবি হয়ে থাকে, তাহলে ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
  • খাবারের দিকে বিশেষ নজর দিন— খিচুড়ি, দুধ, চিজ, তাজা ফল ও শাকসবজি, সম্পূর্ণ দানাশস্য এবং গ্রিন টি — এসব বেশি বেশি করে খেতে হবে।

টিবি হলে সবচেয়ে বেশি যা মেনে চলতে হবে তা হল, চিকিৎসকের কথা মান্য করা এবং যথাযথ সময়ে চিকিৎসার কোর্স শেষ করা।

কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন

 

টিবির স্থায়ী চিকিৎসা কি সম্ভব?

চিকিৎসার দ্বারা টিবিকে প্রায় চিরতরে সারিয়ে তোলা সম্ভব। ৬ মাসের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্স অবশ্যই নিতে হবে। নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। কারণ কয়েক ধরনের টিবিতে কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিক কাজে দেয় না।

টিবির চিকিৎসা কতদিন ধরে চলে?

যাদের টিবি হয়েছে তাদের অধিকাংশকেই অন্তত ৬ মাস টিবির ওষুধ খেতে হবে। তবেই রোগ সারবে।

টিবির ওয়ুধ কতদিনে কাজ করে?

যদি আপনার থেকে অন্যদের টিবির ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছড়ানো ঠেকাতে হয় তাহলে আপনাকে অন্তত ২ বা ৩ সপ্তাহ টিবির ওষুধ খেতে হবে। যখন আপনি কিছুটা সুস্থ বোধ করবেন তখনও পুরো সেরে ওঠার জন্য ওষুধ খেয়ে যেতে হবে। অন্তত ৬ মাস ধরে আপনাকে নানা ধরনের বড়ি খেয়ে যেতে হবে।

টিবি কত ধরনের হয়?

টিবি মূলত চার ধরনের হয়। যেমন—

লেটান্ট টিবি
অ্যাকটিভ টিবি
পালমোনারি টিবি
একস্ট্রা পালমোনারি টিবি

টিবি কীভাবে ছড়ায়?

টিবি একটি সংক্রামক রোগ যা টিবি আক্রান্ত কোনও রোগীর সংস্পর্শে এলে ছড়ায়। টিবি আছে আপনি এমন কারোর সংস্পর্শে এলে, খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে আপনিও ওই রোগে ভুগতে পারেন।

কোন ব্যাকটেরিয়া থেকে টিবি ছড়ায়?

টিউবারকিউলোসিস হয় একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে যার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। এটা একটা সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া, যা ওই ব্যাকটেরিয়ায় দূষিত বাতাসের সংস্পর্শে এলে যে কারোরই হতে পারে।

টিবিতে কি মৃত্যুও হতে পারে?

হ্যাঁ, টিবি হয়ে উঠতে পারে ঘাতক রোগ। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া ফুসফুস, মস্তিষ্ক, হাড় এবং শরীরের অন্য অঙ্গগুলিতেও ছড়াতে পারে।

Written and Verified by:

Dr. Raja Dhar

Dr. Raja Dhar

Director & HOD of Pulmonology Department Exp: 27 Yr

Pulmonology

Book an Appointment

Dr. Raja Dhar has joined as Director & HOD, Department of Pulmonology at The Calcutta Medical Research Institute. Dr Dhar brings with himself more than 27 years of experience in Pulmonology, Critical Medical Management and Interventional Pulmonology. Dr. Dhar is proficient in all disciplines of Respiratory Medicine including airways disease, pulmonary fibrosis, pulmonary hypertension, transplant, lung cancer, sleep medicine, lung infections including TB, and respiratory emergencies. His special interest lies in Interventional Pulmonology including electrocautery, APC, cryotherapy, stent placements and Medical Thoracoscopy. He is passionate about teaching and is an avid researcher and academician.

Related Diseases & Treatments

Treatments in Kolkata

Pulmonology Doctors in Kolkata

NavBook Appt.WhatsappWhatsappCall Now