রিকেট শিশুদের মধ্যে দেখা যাওয়া ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত একপ্রকার হাড়ের অসুখ।এর জন্য শিশুদের হাড়ের বিকাশ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না।এর ফলে হাড়ের ব্যথা অনুভূত হয়, স্বল্পবৃদ্ধি এবং হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়; যার জন্য হাড়ের বিকৃতি দেখা দেয়। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটিই অস্টিওম্যালাসিয়া নামে পরিচিত।
রিকেট শিশুদের মধ্যে দেখা যাওয়া ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত একপ্রকার হাড়ের অসুখ।এর জন্য শিশুদের হাড়ের বিকাশ সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না।এর ফলে হাড়ের ব্যথা অনুভূত হয়, স্বল্পবৃদ্ধি এবং হাড় নরম ও দুর্বল হয়ে যায়; যার জন্য হাড়ের বিকৃতি দেখা দেয়। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটিই অস্টিওম্যালাসিয়া নামে পরিচিত।
রিকেটে, শিশুদের হাড় নরম এবং দুর্বল হয়ে যায়। সাধারণত দীর্ঘকাল ধরে ভিটামিন ডি এর অভাবের কারণে এই রোগটি হয়ে থাকে।অনেকক্ষেত্রে উত্তরাধিকার সূত্রে রিকেটের সমস্যাটি শিশুদের মধ্যে চলে আসতে পারে। ভিটামিন ডি আপনার সন্তানের শরীরে খাদ্য থেকে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস শোষণ করতে সাহায্য করে।পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন ডি না থাকলে হাড় এবং দাঁতের সঠিক ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাস মাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে,যা রিকেট রোগের অন্যতম কারণ।যখন রিকেট ভিটামিন ডি ছাড়া অন্য কারণে হয়, তখন আপনার সন্তানের অতিরিক্ত ওষুধ বা অন্যান্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।রিকেটের ফলে হয়ে থাকা অস্থিবিকৃতি অনেক সময় অস্ত্রোপ্রচারের মাধ্যমে ঠিক করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। অস্থি’র অন্যতম খনিজ উপাদান ফসফরাস কম পরিমাণে থাকার জন্য অস্থি বিকৃতি ঘটতে পারে। যখন হেরিডিটারি কারণে ফসফরাসের মাত্রা কম হয় তখন বিশেষ ধরনের ওষুধের প্রয়োজন হয়।
এখন হয়ত আপনার মনে আসতে পারে যে কি কি উপসর্গ থেকে রিকেট শনাক্ত করা যেতে পারে-
আপনার সন্তানের শরীরের ভিটামিন ডি খাদ্য থেকে ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাস শোষণে সাহায্য করে।আপনার সন্তানের শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন ডি না থাকে তাহলে তার রিকেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রধানত দুটি উৎস থেকে শিশুরা ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ হয়।
1.সূর্যালোক- আপনার সন্তানের ত্বক যখন সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে তখন ভিটামিন ডি তৈরি
হয়। কারণ মানুষের ত্বক সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করতে পারে।যদি আপনার শিশু পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পায় তাহলে সেক্ষেত্রে তার রিকেট হওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো নাও যেতে পারে।
2. খাদ্য- চর্বিযুক্ত মাছ, ডিম ইত্যাদির মত কিছু খাবারে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন ডি থাকে।আপনার সন্তান এইসব খাবার থেকেও ভিটামিন ডি এর চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাই খাদ্যে এই উপাদান কম হলে রিকেটে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থেকে যেতেই পারে।
নবজাতক এবং শিশুরা সবচেয়ে বেশি এই রোগের ঝুঁকিতে থাকে। বিশেষ করে মায়ের বুকের দুধ পান করা শিশুরা।মনে রাখা দরকার যদি স্তন্যদাত্রী মাতা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পান তাহলে সেক্ষেত্রে সেই মায়ের স্তন পান করা শিশুর মধ্যে কিন্তু জটিল পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে।এছাড়া নির্ধারিত সময়ের পূর্বে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের মধ্যেও রিকেটের ঝুঁকির পরিমাণ থাকে অপেক্ষাকৃত বেশি।
আবার যে সমস্ত শিশুরা বাইরে পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় না তাদের মধ্যেও রিকেটের প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে। বিশেষ করে শীতকালে, এই সময় দিনের বেশিরভাগ সময়েই ঘরের জানালা বন্ধ থাকার দরুন সেখান দিয়ে সূর্যরশ্মি ঘরে প্রবেশ করতে পারে না।
শিশুর ত্বকের বর্ণ কালো হলেও তা রিকেটের কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ ত্বক কালো হলে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ডি তৈরি করার জন্য সূর্যের রশ্মি পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষণ করতে বেশি সময় লাগে।
যেহেতু রিকেট শিশুর হাড়ের প্রান্তে (গ্রোথ প্লেট) ক্রমবর্ধমান টিস্যুর অঞ্চলগুলিকে নরম করে, তাই এটি কঙ্কালের বিকৃতির কারণ হতে পারে।এর ফলে যে উপসর্গগুলি দেখা যায় সেগুলির মধ্যে রয়েছে-
অন্যান্য রোগের মত রিকেট নির্ণয়েরও বিভিন্ন উপায় রয়েছে। যদি আপনার সন্তানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ শারীরিক পরীক্ষা বা শরীরে দেখা দেওয়া বিভিন্ন উপসর্গের ভিত্তিতে রিকেট সন্দেহ করেন, তাহলে তাঁরা নিম্নলিখিত এক বা একাধিক পরীক্ষার কথা বলতে পারেন যার ভিত্তিতে তিনি রোগটিকে চিহ্নিত করতে পারেনঃ
রিকেটের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে আপনার সন্তানের ডাক্তারের নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে হবে।ডাক্তারবাবুই ওষুধের ডোজের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেবেন।মনে রাখবেন অত্যধিক ভিটামিন ডি ক্ষতিকারক হতে পারে।ডাক্তারবাবু এক্স-রে এবং রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার সন্তানের অগ্রগতি নিরীক্ষণ করবেন।
রোগের তীব্রতার উপর নির্ভর করে পুষ্টিজনিত রিকেটের চিকিৎসা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। সাধারণত দুর্বলতা বা ব্যথার মতো বেশিরভাগ উপসর্গ কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই কমে যায়। ভিটামিন ডি এর ঘাটতিও ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে পূরণ হয়ে যাওয়া উচিত।
রিকেট প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি পূরণ করা।আর সূর্যালোকে মানব ত্বক ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করতে পারে।তাই বেশিরভাগ ঋতুতে,মধ্যাহ্নের কাছাকাছি সময়ে সূর্যের আলোয় 10 থেকে 15 মিনিট উন্মুক্ত থাকাই যথেষ্ট। তবে আপনার গাত্রবর্ণ যদি কালো হয়, কিম্বা যদি শীতকাল হয় অথবা আপনি যদি উত্তর অক্ষাংশে থাকেন, তাহলে আপনি সূর্যের এক্সপোজার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পেতে সক্ষম হবেন না।
যাইহোক, সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকারক প্রভাবের কথা মাথায় রেখে, ত্বকের ক্যান্সারের উদ্বেগ দূর করতে বাচ্চা থেকে বয়স্ক সকলের জন্যই সরাসরি রোদ এড়াতে সর্বদা সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
সর্বদা নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ শ্রেয়।তাই রিকেট প্রতিরোধ করার জন্য, নিশ্চিত করুন যে আপনার শিশু যেন প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খায় — চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন এবং টুনা, মাছের তেল এবং ডিমের কুসুম, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি। এছাড়া সিরিল, রুটি, দুধ, কমলার রস
খাদ্য তালিকায় রাখা আবশ্যক।
প্রক্রিয়াজাত খাবারে ভিটামিন ডি এর পরিমাপ নির্ধারণ করতে লেবেল চেক করুন। আপনি যদি গর্ভবতী হন,ভিটামিন ডি সম্পূরক গ্রহণ সম্পর্কে আপনার ডাক্তারবাবুকে জিজ্ঞাসা করে নিন এবং নির্দেশিকাগুলি পালন করুন। যেকোনো শিশুর দৈনিক 400 আই ইউ ভিটামিন ডি পাওয়া উচিত বলে মনে করা হয়।
মানুষের মাতৃদুগ্ধে অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি থাকে, তাই যেসব শিশুরা শুধুমাত্র বুকের দুধ খায় তাদের প্রতিদিন পরিপূরক ভিটামিন ডি দেওয়া উচিত।আবার যেসব শিশু বোতলের দুধ পান করে তাদেরও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন হতে পারে যদি তারা তাদের ফর্মুলা দুধ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন ডি না পেয়ে থাকে।তবে সবক্ষেত্রেই আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
হ্যাঁ, রিকেট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই (বিশেষ করে পুষ্টিজনিত রিকেট) সময় থাকতে তাড়াতাড়ি ধরা পড়লে নিরাময়যোগ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, খাদ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে, ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট যোগ করে এবং জোরালো সূর্যালোকে অল্প কিছু সময় রেখে এই রোগ নিরাময় করা যেতে পারে। সমস্যাটি কতটা গুরুতর তার উপর নির্ভর করে, আপনার সন্তানের ডাক্তারবাবু রিকেটের জন্য নিম্নলিখিত এক বা একাধিক চিকিৎসার সুপারিশ করতে পারেন-:
খাবারে সম্পূরকের সংযোজন- রিকেটে ভুগে থাকা শিশুদের খাদ্য তালিকায় মূলত যে দুটি জিনিস সংযোজনের উপর বেশি নজর দিতে ডাক্তাররা সুপারিশ করেন তা হল ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি। এগুলি সাধারণত খাদ্য বা সম্পূরক হিসেবে উচ্চ মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়।সমস্যার তীব্রতা এবং অন্যান্য কারণের উপর নির্ভর করে এই ডোজগুলি কয়েক মাস ধরে দেওয়া যেতে পারে। একবারে উচ্চ মাত্রার প্রয়োজন না হলে আপনার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ একটি আদর্শ দৈনিক ভিটামিন ডি সম্পূরক সুপারিশ করে থাকেন।
সূর্যের আলো- সূর্যালোকের সংস্পর্শে মানব দেহ স্বাভাবিকভাবেই ভিটামিন ডি সংশ্লেষ করে।তাই আপনার শিশুকে কিছু সময়ের জন্য রোদে রাখার পরামর্শ আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে দিয়ে থাকবেন।
সার্জারি- সাধারণত, আপনার সন্তানের হাড়গুলি নিজে থেকেই সোজা হয়ে যায়।তবে কিছু বিশেষ গুরুতর ক্ষেত্রে, বাচ্চাদের হাড়ের বক্রতা ঠিক করার সময় অনেকক্ষেত্রে ব্রেসেস বা ধনুর্বন্ধনী পরতে হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আবার অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হয়ে থাকে।
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য- মাছের তেল, ডিমের কুসুম এবং চর্বিযুক্ত মাছ যেমন স্যামন এবং ম্যাকেরেল ভিটামিন ডি দ্বারা ভরপুর। দুধ, সিরিয়াল এবং বেশ কিছু ফলের রসেও ভিটামিন ডি ভাল পরিমাণে থাকে।তাই ডাক্তারবাবুও এই জাতীয় খাবারগুলি আপনার শিশুকে নিয়ম মেনে খাওয়ানোর নির্দেশ দিয়ে থাকেন।
শিশুদের মধ্যে রিকেট রোগের আলোচনা প্রসঙ্গে আরেকটি যে বিষয় না তুললে আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থেকে যায় সেটি হল-
এই ক্ষেত্রে মূল ব্যাপারটি হল জেনেটিক ডিসঅর্ডার। এটি অবশ্যই আগেরটির থেকে অনেকটাই জটিল। আপনার সন্তানের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এর চিকিৎসার জন্য আপনাকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠাতে পারেন। হাইপোফসফেট্মিক রিকেট হল এক প্রকারের জেনেটিক রিকেট। এটি অনেকগুলি জিনের মিউটেশনের ফলে সংগঠিত হয়।এই রোগটিতে অস্থি এবং বৃক্কে ফসফেটের ক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
ফসফেট সাপ্লিমেন্ট এবং বিশেষ ধরনের ভিটামিন ডি এর সাহায্যে এর চিকিৎসা করা হয়।
শিশুদের পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্যও রিকেট একটা দুঃস্বপ্ন।তবে গর্ভাবস্থাকালীন সময় থেকে গর্ভবতী মায়েরা নিজেদের যত্ন নিন এবং পাশাপাশি শিশুদের উপর সতর্ক নজর জারি রেখে সঠিক সময়ে ডাক্তারবাবুর সাহায্যে পরামর্শ মেনে চলুন।তাতে কিছুটা হলেও রিকেটের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।সতর্ক থাকুন এবং আপনার ছোট্টটিকেও সুরক্ষিত ও ভাল রাখুন।
Written and Verified by:
Consultant - Orthopaedics Exp: 10 Yr
Orthopaedics & Joint Replacement
Dr. Golam Hashib wrote his thesis for his MS on A comparative study between interlocking nail and dynamic compression plate in the management of diaphyseal fractures shaft humerus.He was also part of prestigious conferences like Bihar Orthopedic association 37th Annual conference, BOACON-20011, Beusarai, 56th Annual Conference of Indian Orthopaedic Association, IOACON-2011, Ghaziabad/Noida, 57th Annual Conference of Indian Orthopaedic Association, IOACON 2012, Chennai, TN.
Similar Orthopedics & Joint Replacement Blogs
Book Your Appointment TODAY
© 2024 CMRI Kolkata. All Rights Reserved.