Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp Lab report/login
সাদা স্রাবের কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা

Home > Blogs > সাদা স্রাবের কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা

সাদা স্রাবের কারণ, উপসর্গ এবং চিকিৎসা

Obstetrics and Gynaecology | by Dr. Syed Monajatur Rahman | Published on 02/05/2024



যৌন এবং প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে অবহেলার কারণে মেয়েদের অনেক জটিল শারীরিক সমস্যায় পড়তে হয়। এধরনের জটিল রোগের অন্যতম হল লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব। আসুন, সাদা স্রাব সম্পর্কে বিশদে েজনে নেওয়া যাক।

সাদা স্রাব কি?

Leucorrhoea শব্দটিকে অনেক সময় Leucorrhoea হিসাবেও লেখা হয়।এই রোগ হলে মেয়েদের জরায়ু থেকে সাদা, হলুদ, হাল্কা নীল কিংবা লাল চটচটে তরল পদার্থ বের হয়। লিউকোরিয়া হলে মেয়েদের শরীরে সংক্রমণের ভয় থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই সাদা স্রাব দেখা যায়।

তবে এই রোগটা যে কোনও বয়সের মেয়েদের হতে পারে। সাধারণত মাসিকের আগে বা পরে ১ থেকে ২ দিন সাদা স্রাব হয়। লিউকোরিয়ার প্রকোপের সময় স্রাবের রঙ, পরিমাণ, অবস্থান এবং স্থায়িত্ব কতটা হবে তা প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে আলাদা হওয়ার কথা।

লিউকোরিয়া রোগের উপসর্গগুলি কী কী?

লিউকোরিয়া রোগের সবচেয়ে বড় উপসর্গ বা লক্ষণ হল, এই রোগের কারণে জরায়ু থেকে সাদা, হলুদ, হাল্কা নীল কিংবা লাল রঙের এবং দুর্গন্ধযুক্ত চটচটে তরল নির্গমন হয়। এছাড়া নিউকোরিয়া হলে মেয়েদের শরীরে আরও অনেক রকম উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লক্ষণগুলির মধ্যে পড়ে—

  • যোনিদেশে চুলকানি
  • স্মৃিতভ্রংশ
  • খিদে কমে যাওয়া ও মাথা ঘোরা
  • হাত, পা, কোমর ও শ্রোণিদেশে ব্যথা
  • পায়ের পেশিতে টান ধরা
  • বমি বমি ভাব, কনও কখনও বমি হওয়া
  • বার বার প্রস্রাব করা
  • প্রস্রাব না হওয়া এবং পেট ভারী বোধ হওয়া
  • বিষন্নতা এবং খিটখিটে ভাব

যদি আপনি নিজের শরীরে এই সব লক্ষণগুলি দেখতে পান তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

লিউকোরিয়া কেন হয়?

অনেক কারণে লিউকোরিয়া হতে পারে। যার মধ্যে মূলত রয়েছে যোনিদ্বারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা, শরীরে রক্তের অভাব, অতিরিক্ত স্বমেহন, ত্রুটিপূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক, অনেক বেশি উপোস করা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, রোগগ্রস্ত পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক, যোনিদ্বারে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি, যোনিদ্বার কিংবা জরায়ুর মুখে ফোস্কা কিংবা বার বার সন্তান নষ্ট হওয়া ইত্যাদি। 

এসব ছাড়াও, আরও অন্য অনেক কারণে মেয়েদের লিউকোরিয়ার সমস্যা হতে পারে। যেমন—

  • গর্ভধারণ
  • প্রস্রাবে সংক্রমণ
  • ফরএভার
  • টিকাদান
  • দেহে ভাল ব্যাকটেরিয়ার অভাব
  • প্রোসোপ্লাসিয়া 
  • ডায়াবেটিসের কারণে যোনিদ্বারে ফাংগাল ইস্ট সংক্রমণ হতে পারে
  • অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাদার খাবার খাওয়া 

ওপরে যে সব কারণের কথা বলা হল সেগুলির বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে যদি কোনও মহিলা আগাম সতর্কতা নেন, তাহলে তাঁর লিউকোরিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমবে কিংবা ঝুঁকি একেবারেই থাকবে না। 

লিউকোরিয়ার পরীক্ষা

লিউকোরিয়া হয়েছে কিনা জানতে চিকিৎসকেরা যোনি থেকে নির্গত তরল পরীক্ষা করে দেখেন তাতে জীবাণু আছে কিনা কিংবা হোয়াইট ব্লাড সেলের সংখ্যা কত। অনুবীক্ষণ যন্ত্রের পরীক্ষায় যদি দেখা যায় হোয়াইট ব্লাড সেল-এর কাউন্ট ১০ এর বেশি, তাহলেই বোঝা যাবে কারোর লিউকোরিয়া হয়েছে।

লিউকোরিয়ার চিকিৎসা

লিউকোরিয়া হলে যোনি থেকে যে তরল নির্গমন হয় চিকিৎসকেরা তার কারণ জানার চেষ্টা করেন। এরপর দেখেন ওই তরল বা স্রাব কী ধরনের, রঙ কী, কতক্ষণ সাদা স্রাব স্থায়ী হয়, নির্গমন কতটা তীব্র ইত্যাদি বিষয়। এগুলো জানার পরেই চিকিৎসকেরা কীভাবে এর চিকিৎসা করবেন তা ঠিক করেন। সাধারণত, প্রাথমিক স্তরে নিউকোরিয়ার চিকিৎসা হল — চিকিৎসকেরা রোগীকে জীবনশৈলি বা লাইফস্টাইলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন। যদি তাতে কোনও লাভ না হয়, তখন বিশেষ সাপলিমেন্ট এবং ওয়ুধ দেওয়া হয়। 

সাদা স্রাব কি বন্ধ করা যায়?

কয়েকটি বিশেষ বিষয়ে নজর দিলে লিউকোরিয়া বা সাদা স্রাব হওয়া আটকানো যায়। এসবের মধ্যে পড়ে:

  • স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া
  • যৌন স্বাস্থ্য এবং প্রজনন বিষয়ে যত্ন নেওয়া সতর্ক থাকা
  • গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা

যদি দেখা যায় যোনি থেকে বেরোনো স্রাবে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। লিউকোরিয়া একটা সাধারণ সমস্যা, তবে চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে এই রোগ অস্বস্তিকর তো বটেই, এমনকী স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনকও হয়ে উঠতে পারে। তাই খুব দ্রুত চিকিৎসকেরা সঙ্গে পরামর্শ কতরা জরুরি। 

কয়েকটি জরুরি প্রশ্ন

 

কীভাবে লিউকোরিয়া পুরোপুরি নিরাময় করা যায়?

লিউকোরিয়াকে শিকড় থেকে উৎখাত করতে হলে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং জীবনশৈলিতে পরিবর্তন আনতে হবে। রোজকার খাবারে থাকতে হবে ফলমূল ও শাকসব্জি। যৌন ও প্রজনন জনিত স্বাস্থ্য বিষয়ে বিশেষ যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও প্রাণায়াম করতে হবে। লিউকোরিয়ার লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকেরা পরামর্শ নিতে হবে। 

লিউকোরিয়া হলে কী কী খাবার ও পানীয় খাওয়া উচিত?

লিউকোরিয়া হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন রোগীর খাবারে বেশি বেশি করে সবুজ শাকসবজি, তাজা ফল থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে প্রচণ্ড তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। জাঙ্ক ফুড, ঠান্ডা পানীয়, অ্যালকোহল, ধূমপান চালিয়ে গেলে লিউকোরিযার উপসর্গ আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তাই এসবও এড়িয়ে চলা উচিত।