Enquire now
Enquire NowCall Back Whatsapp
জেনে নিন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে

Home > Blogs > জেনে নিন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে

জেনে নিন গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে

Obstetrics and Gynaecology | by Dr. Parnamita Bhattacharya | Published on 02/02/2024



মা হওয়ার সুখ এই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ। প্রেগনেন্সির সময় একজন মহিলার শরীরে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনগুলি প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়, যা সকলের জানা উচিত। গর্ভধারণের বিষয়ে যে কোনও সমস্যার জন্য আমরা আপনাকে আমাদের গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেব।

যদি আপনি প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে বিশদে জানতে চান, তাহলে এই ব্লগটি আপনার জন্য বিশেষ। এই ব্লগে আমরা প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে বিশদে জানার চেষ্টা করব।

প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ কী কী?

প্রেগনেন্সি সম্পর্কে নিশ্চিতকরণ শুধুমাত্র প্রেগনেন্সি টেস্টের মাধ্যমে হয়। তবে কিছু লক্ষণ আছে, যা থেকে ধারণা করা যায় যে আপনি প্রেগন্যান্ট কিনা। হালকা স্পটিং এবং পিরিয়ড মিস হওয়া প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ, যা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানেন। কিন্তু এর অতিরিক্ত আরও কিছু প্রাথমিক লক্ষণ আছে, যা প্রতিটি মহিলার জানা উচিত।

প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ:

এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রেগনেন্সি একটি সুন্দর অনুভূতি। এই অবস্থার কিছু প্রাথমিক লক্ষণও রয়েছে যা থেকে প্রেগনেন্সির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আসুন প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণগুলি বিশদে জানি ও বুঝি -

  • পিরিয়ড মিস হওয়া: পিরিয়ড মিস হওয়াকে আপনি প্রেগনেন্সির প্রথম লক্ষণ বলতে পারেন। যদি অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের আগে পিরিয়ড নিয়মিত থাকে এবং সম্পর্কের পরে পিরিয়ড মিস হয়ে যায়, তবে এটি প্রেগনেন্সির দিকে ইঙ্গিত করে।
  • স্তনগুলিতে সংবেদনশীলতা: প্রেগনেন্সির কারণে স্তনে পরিবর্তন হয়, যা স্বাভাবিক। স্তনে ফোলাভাব, ব্যথা এবং সংবেদনশীলতা প্রেগনেন্সির একটি লক্ষণ। এর সঙ্গে নিপল (এরিওলা) এর রঙ ও আকারেও পরিবর্তন দেখা যায়।
  • ক্লান্তি এবং দুর্বলতা: প্রেগনেন্সির সময় প্রোজেস্টেরন নামে হরমোনের স্তর শরীরে বেড়ে যায়। এর ফলে মহিলাকে ক্লান্তি এবং দুর্বলতার সম্মুখীন হতে হয়।
  • বমি ভাব ও বমি আসা (মর্নিং সিকনেস): প্রেগনেন্সির সময় শরীরে অনেক হরমোনাল পরিবর্তন হয়, যার ফলে মহিলার সারাদিন বমি ভাব ও বমির সমস্যা হতে পারে। এই অবস্থাকে চিকিৎসা পরিভাষায় মর্নিং সিকনেস বলা হয়।
  • বারবার প্রস্রাব করা: প্রেগনেন্সির সময় গর্ভাশয়ের কারণে ব্লাডারে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যার ফলে বারবার প্রস্রাব করতে ইচ্ছে করে। এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ, যা ক্রমাগত থাকতে পারে।
  • ক্ষুধার পরিবর্তন: প্রেগনেন্সির সময় ক্ষুধায় অনেক ওঠানামা হয়। অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে বেশি বা কম ক্ষুধা লাগা প্রেগনেন্সির একটি প্রাথমিক লক্ষণ।
  • পেটে কড়কানি বা ফোলা: প্রেগনেন্সির সময় শরীরে কিছু পরিবর্তন হয়, যার ফলে মহিলার পেটে হালকা ব্যথা, কড়কানি বা ফোলাভাব হতে পারে।
  • মুড সুইং: সাধারণত পিরিয়ডের সময় মুড সুইং দেখা যায়, তবে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের পরে যদি পিরিয়ড মিস হয় এবং হঠাৎ মুড সুইং হয়, তবে এটি প্রেগনেন্সির ইঙ্গিত দেয়।

এই সবের অতিরিক্ত কিছু অন্যান্য লক্ষণও মহিলারা অনুভব করতে পারেন যেমন -

  • স্পটিং (যা ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং বলা হয়)
  • মাথাব্যথা ও মাথা ঘোরা
  • প্রেগনেন্সির প্রাথমিক দিনগুলিতে নাক বন্ধ থাকা
  • পেট ফোলা
  • ত্বকের পরিবর্তন

এগুলির বেশিরভাগ লক্ষণ প্রেগনেন্সির পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে, তাই লক্ষণ দেখা দিলে প্রেগনেন্সি টেস্ট কিট দিয়ে পরীক্ষা করুন বা আমাদের গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে কথা বলুন।

গর্ভাবস্থার মাসিক লক্ষণ

প্রেগনেন্সির বিভিন্ন মাসে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়, যা জানা জরুরি। আসুন প্রতিটি মাসের লক্ষণগুলি জানি -

  • প্রথম মাস: স্তনে ফোলাভাব ও ব্যথার সঙ্গে ক্লান্তি, অসুস্থতা ও বমি প্রেগনেন্সির প্রথম মাসের লক্ষণ।
  • দ্বিতীয় মাস: পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস এবং মুড সুইং প্রেগনেন্সির দ্বিতীয় মাসের লক্ষণ।
  • তৃতীয় মাস: ওজন বৃদ্ধি এবং পেটের বৃদ্ধি তৃতীয় মাসের লক্ষণ। এই সময় শারীরিক পরিবর্তনগুলি ঘটে।\
  • চতুর্থ মাস: পেটে শিশুর নড়াচড়া অনুভব হওয়া এবং মুখের উজ্জ্বলতা গর্ভাবস্থার চতুর্থ মাসের লক্ষণ।
  • পঞ্চম মাস: এই সময় শিশুর নড়াচড়া আরও স্পষ্ট হবে এবং মহিলারা বেশি ক্লান্তি অনুভব করবেন।
  • ষষ্ঠ মাস: প্রেগনেন্সির কারণে শরীরে কিছু পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে কিডনিতে ব্যথা হয়। এর অতিরিক্ত অনিয়মিত শ্বাসপ্রশ্বাসও প্রেগনেন্সির ষষ্ঠ মাসের লক্ষণগুলির মধ্যে একটি।
  • সপ্তম মাস: এই সময় শরীর আপনাকে বাস্তব লেবারের জন্য প্রস্তুত করে। এর অতিরিক্ত শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন পা, হাত এবং মুখ ফুলে যায়।
  • অষ্টম মাস: এই সময় শরীরে নড়াচড়ার সঙ্গে মহিলার স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে যায়। এই সময় আপনার ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগে থাকা উচিত।
  • নবম মাস: এই সময় নিয়মিত লেবার পেন হয়, যাতে কোমর ও পেটে ব্যথা হয়। এর সঙ্গে মহিলার নালি থেকে পানি পড়া শিশুর জন্মের সময় হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

উপসংহার

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভধারণের কয়েকদিন পর মহিলারা নিজের মধ্যে প্রেগনেন্সির লক্ষণগুলি দেখতে পান। কিন্তু কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দেরিতে দেখা যায়। গর্ভাবস্থার বেশিরভাগ লক্ষণ পিরিয়ডের সময় বা তার 1-2 সপ্তাহ আগে বা পরে দেখা যায়।

যদি একজন মহিলা গর্ভধারণ করার চেষ্টা করছেন এবং নিজে উপরোক্ত লক্ষণগুলি দেখতে পান, তবে তাকে গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। এতে বিশেষজ্ঞরা লক্ষণের সঠিক কারণ নিশ্চিত করতে পারেন। এছাড়া, গর্ভাবস্থা হলে সঠিক পরামর্শ দেন যাতে গর্ভাবস্থাটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন


পিরিয়ড মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন?

যদি আপনার পিরিয়ড সাইকেল নিয়মিত হয়, তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার প্রথম দিনেও আপনি প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে পারেন। যদি আপনার পিরিয়ড সাইকেল নিয়মিত না হয়, তবে আপনি 7-10 দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন। তবে 6-7 দিন পরেও টেস্ট করলে সঠিক ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।

প্রেগনেন্সির লক্ষণ কতদিনে দেখা যায়?

সাধারণত গর্ভধারণের 6-41 দিনের মধ্যে গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলি দেখা দিতে শুরু করে। তবে, কিছু মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভধারণের 2 থেকে 3 সপ্তাহ পরও লক্ষণগুলি দেখা দেয় না। সুতরাং, যদি আপনি আপনার মধ্যে গর্ভাবস্থার লক্ষণগুলি দেখতে পান তবে গাইনি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

প্রেগনেন্সির প্রাথমিক লক্ষণ কবে দেখা যায়?

গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলি গর্ভধারণের 1-2 সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয়, কিন্তু পিরিয়ড মিস হওয়ার পরও এগুলি প্রকাশিত হতে পারে। অনেক মহিলার গর্ভধারণের প্রথম মাসে লক্ষণগুলি দেখা দেয় না, তবে কিছু মহিলার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলি দেখা দেয়। তাই যদি আপনি উপরের লক্ষণগুলি নিজের মধ্যে দেখতে পান, তবে আপনার গাইনোকোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

প্রেগনেন্সির প্রথম মাসে কী কী ঘটে?

গর্ভধারণের প্রথম মাসে শরীরে ছোট ছোট পরিবর্তন হয়, যার ফলে স্তনে ব্যথা এবং ফোলাভাব হয়। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব এবং ক্লান্তিও অনুভব হতে পারে। যদিও প্রথম মাসে শিশুর আকার খুবই ছোট হয়, তবে এই মাসে স্তনে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ক্লান্তি সাধারণ লক্ষণ। এই সময় নিয়মিত গাইনি পরামর্শ নেওয়া উচিত।