ডায়াবেটিস কী? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য - লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
Home >Blogs >ডায়াবেটিস কী? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য - লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

ডায়াবেটিস কী? জেনে নিন এর সম্পূর্ণ তথ্য - লক্ষণ থেকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

Summary

ডায়াবেটিস হল এমন একটি অবস্থা, যেখানে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে না, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। প্রধান লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস ও দৃষ্টি ঝাপসা। টাইপ 1 এবং টাইপ 2 এই রোগের সাধারণ ধরন। নিয়মিত ডায়েট, ব্যায়াম, ওষুধ এবং রক্তে শর্করার পরীক্ষা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

ডায়াবেটিস কী?

ডায়াবেটিস হল শরীরের এমন একটি গুরুতর অবস্থা, যখন আমাদের শরীর নিজে থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা তৈরি হওয়া ইনসুলিন দক্ষতার সঙ্গে (কার্যকরভাবে) ব্যবহার করতে পারে না। এর ফলে রক্তে শর্করার বা গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়।

ইনসুলিন মানুষের শরীরের কোষগুলি তে শর্করা প্রবেশ নিয়ন্ত্রন করে। অর্থাৎ একটি "চাবি" হিসাবে কাজ করে। এর দ্বারা আমাদের খাবার থেকে যে চিনি বা শর্করা (গ্লুকোজ) পাওয়া যায়, তা রক্তের মধ্য দিয়ে বাহিত হয়ে কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। তারপর, কোষ শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির জন্য সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে। ইনসুলিন তৈরি হয় অগ্ন্যাশয়ের বিশেষ কোষ দ্বারা তৈরি হরমোন আইলেটস (আই-লেটস) থেকে। ডায়াবেটিস-জনিত ইনসুলিনের তারতম্যের জন্য আমাদের রক্তে শর্করার মাত্রার তারতম্য ঘটে। শরীরে বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়।

ডায়াবেটিসের ধরণ:

  • টাইপ 1
  • টাইপ 2

টাইপ 1 এবং টাইপ 2 হল ডায়াবেটিসের দুটি সাধারণ রূপ। এছাড়া অন্যান্য ধরণেরও ডায়াবেটিস হতে পারে, যেমন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, নিওনাটাল ডায়াবেটিস, জেসটেসানাল ডায়াবেটিস ইত্যাদি।

ডায়াবেটিস এর লক্ষণ

টাইপ 1 ডায়াবেটিসের লক্ষণ:

টাইপ 1 ডায়াবেটিস-এর সূত্রপাত খুব দ্রুত ঘটে এবং নিম্নলিখিত উপসর্গ গুলি হঠাৎ দেখা দিতে পারে:

  • তীব্র তৃষ্ণা 
  • অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা
  • দ্রুত ওজন হ্রাস
  • প্রচণ্ড ক্ষুধা
  • দুর্বলতা বা ক্লান্তি
  • অস্বাভাবিক বিরক্তি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • বমি বমি ভাব 
  • পেটে ব্যথা
  • অপ্রীতিকর গন্ধের অনুভূতি
  • চুলকানি

টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ :

ডায়াবেটিসের সবচেয়ে সাধারণ রূপটি কে টাইপ 2 ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন-অনির্ভর ডায়াবেটিস বলা হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রায় 90% লোকের টাইপ 2 ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। টাইপ 2 ডায়াবেটিস কে প্রাপ্তবয়স্ক সূচক (adult-onset) ডায়াবেটিস-ও বলা হয়, কারণ এটি সাধারণত 35 বছর বয়সের পরে প্রকাশ পায়। তবে, ইদানিং ক্রমবর্ধমান সংখ্যক অল্পবয়স্ক মানুষদের-ও টাইপ 2 ডায়াবেটিস হচ্ছে।

টাইপ 2 ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজস্ব ইনসুলিন তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু প্রায়শই, এটি পরিমাণে যথেষ্ট নয় বা কোষ যথাযথ ভাবে প্রতিক্রিয়া করে না। অর্থাৎ ইনসুলিন শরীরের কোষগুলিকে খোলার জন্য চাবি হিসাবে সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে শর্করা কোষে প্রবেশ করতে পারে না। একে বলা হয় ইনসুলিন-রেজিস্ট্যান্স। টাইপ 2 ডায়াবেটিস সাধারণত স্থূলকায় ব্যাক্তি এবং ব্যায়াম-রহিত (sedentary) জীবনধারার অভ্যস্ত ব্যাক্তি দের হয়ে থাকে। 

টাইপ 2 ডায়াবেটিস-এর লক্ষণ গুলি টাইপ 1 ডায়াবেটিস এর মতোই। কিন্তু টাইপ 2 ডায়াবেটিসের সূত্রপাত সাধারণত ধীর গতিতে হয়। লক্ষণগুলিইও টাইপ 1 ডায়াবেটিসের মতো স্পষ্ট ভাবে লক্ষণীয় হয় না। এই কারণে, অনেকে ভুলবশত অসতর্ক হন।

টাইপ 2 ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • ধীরে গতিতে ক্ষতস্থান নিরাময় 
  • তীব্র তৃষ্ণা 
  • অতিরিক্ত প্রস্রাবের প্রবণতা
  • দ্রুত হারে ওজন হ্রাস
  • অপ্রীতিকর গন্ধের অনুভূতি 
  • হাতে এবং পায়ে ঝিনঝিন 
  • চুলকানি 
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • মেজাজ পরিবর্তন
  • মাথাব্যথা
  • মাথা ঘোরা 
  • বগল এবং ঘাড়ের কাছে কালচে ছাপ

ডায়াবেটিসের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

টাইপ 1 ডায়াবেটিস চিকিৎসা:

টাইপ 1 ডায়াবেটিস ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ করে বা ইনসুলিন পাম্প বা অন্য ডিভাইস ব্যবহার করে চিকিৎসা করা হয়। বাইরে থেকে প্রয়োগ করা (ইঞ্জেকটেড) ইনসুলিন কোষে শর্করা যাতায়াতের চাবি হিসাবে কাজ করে। শরীরের কোষগুলিতে গ্লুকোজ প্রবেশ করে। অবশ্য ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হল কতটা ইনসুলিন নিতে হবে তা সঠিকভাবে জানা কঠিন। এর পরিমাণ অনেক কারণের উপর নির্ভর করে, যেমন-

  • খাদ্যাভাস
  • ব্যায়াম
  • মানসিক চাপ
  • আবেগ এবং সাধারণ স্বাস্থ্য

ইনসুলিনের কী ডোজ গ্রহণ করা হবে তা নির্ধারণ করা একটি জটিল কাজ। যদি কেউ অত্যধিক ইনসুলিন গ্রহণ করেন, তাহলে তার রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনক ভাবে নিম্ন স্তরে নেমে যেতে পারে। এটিকে হাইপো-গ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এতে জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

একই ভাবে যদি প্রয়োজনের থেকে খুব কম পরিমাণ ইনসুলিন গ্রহণ করা হয় তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু কোষগুলিতে শর্করার অভাব দেখা দেয়। একে হাইপার-গ্লাইসেমিয়া বলা হয়। এই অবস্থাতে-ও জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

টাইপ 2 ডায়াবেটিসের চিকিৎসা:

এই ধরনের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য শরীর দ্বারা উত্পাদিত ইনসুলিনকে আরও ভালোভাবে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে বের করা জড়িত। কার্ডিওলজি ডাক্তাররা ডায়েট, ব্যায়াম এবং ওজন কমানোর উপর জোর দেন। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে শরীরের ইনসুলিন ব্যবহারের ক্ষমতা বেড়ে যায়।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য

প্রঃ ডায়াবেটিসে কি কি খাবেন না?

ডায়াবেটিসে কখনই শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাওয়া চলবে না। বিশেষত, 

  • যেসব খাদ্য বা পানীয়তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে সেসব বর্জন করতে হবে।
  • কাঁচা লবণ খাওয়া এড়াতে হবে। 
  • বেশি ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। 
  • অতিরিক্ত চা বা কফি পান বারণ। 
  • ফ্যাট-যুক্ত দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার বর্জন করতে হবে। 
  • ভাত, আলু, কলা এবং গাজরে শর্করা বেশি থাকে। সুতরাং এই খাবার গুলি খাওয়া নিয়ন্ত্রন করতে হবে।

ডায়াবেটিসে কোন কোন ফল খাওয়া উচিত?

নিম্নলিখিত ৭ টি ফল ডায়াবেটিসে খাওয়া চলে -

  • আপেল
  • অ্যাভোকাডো
  •  পেঁপে
  • বেরি জাতীয় ফল
  • কামরাঙা
  • নাশপাতি
  • কমলা

সুগার এবং ডায়াবেটিস-এর মধ্যে পার্থক্য কি?

ব্লাড সুগার বা গ্লুকোজ হল আমাদের রক্তে অবস্থিত শর্করা বা চিনি। এই শর্করা আমাদের খাবার থেকে আসে এবং এটি শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। শরীরে শক্তির চাহিদা পূরণের জন্য, রক্ত শরীরের প্রত্যেকটি কোষে গ্লুকোজ বহন করে। ডায়াবেটিস হল এমন একটি রোগ যেখানে রক্তে এই শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকেনা।

ডায়াবেটিস কি পুরোপুরি সারানো সম্ভব?

টাইপ ১ ডায়াবেটিস বর্তমানে পুরোপুরি সারানো সম্ভব নয়, তবে টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়মিত ডায়েট, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

ডায়াবেটিসের প্রথম সতর্ক সংকেত কী কী?

বারবার প্রস্রাব হওয়া, অতিরিক্ত তৃষ্ণা, অস্বাভাবিক ক্লান্তি, অযৌক্তিক ওজন কমে যাওয়া, এবং দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া ডায়াবেটিসের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত।

ডায়াবেটিসের জটিলতা কী হতে পারে?

দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিস হৃদরোগ, কিডনি বিকল, চোখের রেটিনা ক্ষতি, স্নায়ুর সমস্যা এবং পায়ের ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য করণীয় কী?

সুষম খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার, এবং নিয়মিত রক্তে শর্করা পরীক্ষা প্রতিরোধে সহায়ক।

Written and Verified by:

Dr. Tarun Praharaj

Dr. Tarun Praharaj

Senior Consultant Exp: 34 Yr

Cardiology

Book an Appointment

Related Diseases & Treatments

Diabetes & Endocrinology Doctors in Kolkata

NavBook Appt.WhatsappWhatsappCall Now