Dermatology | by Dr. Sanjay Agarwal | Published on 12/05/2023
রাস্তাঘাটে প্রায়শই এমন কিছু মানুষের দেখা মেলে যাদের ত্বকে অল্প-বিস্তর ছোপ ছোপ সাদা রঙ দেখা যায়।যার ফলে অনেক মানুষের ভিড়ে এই ধরনের মানুষকে সহজেই আলাদা করা যায়।কোনো অনুষ্ঠান বাড়িতে এই ধরনের ব্যাক্তিদের আড়ষ্টতা চোখ এড়ায় না।
আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হল ত্বকের সাদা দাগ, চলতি কথায় অনেকে একে শ্বেতী বলেন।আর ডাক্তারি পরিভাষায় যা ভিটিলিগো নামে পরিচিত।
ভিটিলিগো (vit-ih-LIE-go) হল এমন একটি রোগ যার কারণে ত্বকের বর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। বিবর্ণ অঞ্চলটি সাধারণত সময়ের সাথে সাথে বড় হতে থাকে।এই সাদা সাদা দাগ বা ছোপ হওয়া শরীরের যে কোনো অংশের ত্বকের উপর থেকেই শুরু হতে পারে। চুল, ভ্রু এমনকি মুখের ভিতরেও এটা হতে পারে।
একাধিক কারণের জন্য বয়সভেদে মানবদেহের ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় শ্বেতি দেখা দিতে পারে যেগুলি সম্পর্কে নিচে আলচনা করা হলঃ
ভিটিলিগোর কারণঃ প্রথমত, মানব দেহের ত্বক এবং চুলের রঙ মেলানিন দ্বারা নির্ধারিত হয়। যখন মেলানিন উৎপাদনকারী কোষগুলি মারা যায় বা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখনই চামড়ার উপর ভিটিলিগো বা শ্বেতি দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত, উপরের কারণটি ছাড়াও আরও নানা কারণে শ্বেতি দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রসাধনীর ব্যবহার, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের চটি, বেল্টের মত কোনওকিছু একভাবে শরীরের এক জায়গায় চেপে বসে থাকার মত বিষয়গুলি।
ভিটিলিগো সব ধরনের ত্বকের মানুষকে প্রভাবিত করে, তবে বাদামী বা কালো ত্বকের লোকেদের মধ্যে এটি আরও স্পষ্ট ভাবে পরিলক্ষিত হয়। এটা অবশ্য জীবননাশক বা সংক্রামক নয়।তবুও এর সাথে জড়িত মানুষের নানা কুসংস্কারের কারণে এই রোগটির একটা সামাজিক প্রভাব আছে যা আপনাকে স্বাভাবিকভাবেই একটা চাপে ফেলে দেয়। যা হতে পারে আপনার নিজের সম্পর্কে একটা খারাপ বোধ বা অস্বস্তি ও সংকোচ তৈরি হওয়া।
এ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে, দেহে মেলানিনের অভাব কেন হয় তার কারণ এখনও অজানা। তবে নিম্নলিখিত কিছু বিষয় এর সম্ভাব্য কারণ হতে পারে বলে মনে করা যায়।
ভিটিলিগো হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই।নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যেকোনো মানুষের যে কোনো সময়ে এই রোগটি হতে পারে।সাধারণত 30 বছর বয়সের আগে ম্যাকুলস বা প্যাচগুলি স্পষ্ট হয়ে যায়।আপনি যদি কোন অটো ইমিউন ডিজিজ বা অ্যাডিসিন রোগে আগে থেকে আক্রান্ত থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রে ভিটিলিগো হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।।
মানবদেহে এর তীব্রতা, ধরণ ও স্থায়ীত্বের ভিত্তিতে ভিটিলিগো বা শ্বেতি নানা প্রকারের হয়ে থাকে।যার মধ্যে রয়েছে-
যখন শরীরের অনেকাংশে একসাথে সাদা সাদা দাগ দেখা যায় তখন তাকে সাধারন ভিটিলিগো বলে।এগুলি সাধারণত একসাথে বাড়তে থাকে।
মিউকোসালঃ এই প্রকারের ভিটিলিগো মুখ, নাক, যৌনাঙ্গের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে আক্রান্ত করে।
ট্রাইকোমঃ প্রথমে বর্ণহীন বা সাদা বুলসি তৈরী হয় সেখান থেকে ত্বকে হালকা পিগমেন্টেশন শুরু হয়।
সার্বজনীনঃ এটি একটি বিরল প্রকৃতির ভিটিলিগো যেখানে সারা শরীরের ত্বকের প্রায় 80% অঞ্চলে রঞ্জক পদার্থ থাকে না।
সত্যি বলতে ভিটিলিগোর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। আসল কথা হল এর চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কারণ শ্বেতি থেকে জীবন হানি ঘটার সম্ভাবনা একেবারেই নেই বললে চলে। তবে কর্টিকোস্টেরয়েড, টপিকাল জানুস কিনেস ইনহিবিটরস (রাক্সোলিটিনিব), ক্যালসিনুরিন ইনহিবিটরস জাতীয় কিছু ওষুধ রয়েছে যা পিগমেন্টেশন হ্রাসের গতি কমিয়ে দিতে পারে। যদি এটা ঠোঁট এবং নখের ডগা পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় সেক্ষেত্রে অটোলোগাস মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্ট করা যেতে পারে।গুরুতর সমস্যার ক্ষেত্রে হাল আমলে স্কিন গ্রাফটিং চালু হয়েছে। আর মানসিক ভাবে আহত হলে কাউন্সিলিং করাতে পারেন।
এগুলি ছাড়াও বর্তমানে শ্বেতির চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকটি থেরাপি রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে এবার জেনে রাখুন-
ডিপিগমেন্টেশন থেরাপি- এই পদ্ধতিতে ভিটিলিগোতে আক্রান্ত ত্বকের অংশগুলির সাথে মিলিয়ে আপনার ত্বকের স্বাভাবিক রঙকে ফিকে করে সমতা আনার চেষ্টা করা হয়। ডিপিগমেন্টেশন থেরাপিতে মনোবেনজোন ড্রাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি আপনার ত্বকের পিগমেন্টেড প্যাচগুলিতে এই ওষুধটি প্রয়োগ করতে পারেন। এটি আপনার ত্বককে সাদা করে তুলবে যাতে আপনার ত্বকের অংশগুলি ভিটিলিগোর সাথে মেলে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, ভিটামিন এ, সি, ই এবং কে মেলানোসাইটের পরিমান কমাতে সাহায্য করে। দুধে ঐ সকল ভিটামিনগুলি প্রচুর পরিমানে থাকে। এছাড়াও ডিম, পনির, গাজর, দই, চিয়া বীজ, ওটমিল, আদা, তরমুজ, কিউই, পেঁপে, শুকনো ফল এবং সবুজ শাক-সবজি এই তালিকার মধ্যে পড়ে যেগুলি শরীরের মেলানিন কমাতে সাহায্য করে।
ভিটিলিগোর সে অর্থে কোনো প্রতিকার নেই কিন্তু আপনি যদি চিকিৎসা নিতেই চান, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী আপনাকে আপনার এবং আপনার ত্বকের জন্য সঠিক চিকিৎসা বেছে নিতে সাহায্য করবেন।
সবশেষে যেটা বলার, ভিটিলিগো বা শ্বেতি কোনো স্বাস্থ্যহানিকারক জটিল রোগ নয়।এটি কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়।এর সাথে কুষ্ঠ রোগের কোনো প্রকার সম্পর্ক নেই।এটি শারীরিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে না।একজন শ্বেতি রোগী অনায়াসে স্বাভাবিক জীবনযাপনের যোগ্য। তাই অযথা রটে থাকা সামাজিক কুসংস্কার ও আত্ম সংকোচবোধ ঝেড়ে ফেলুন ও আত্মবিশ্বাসের সাথে আনন্দে স্বাভাবিক জীবন উপভোগ করুন।
তবে যেকোনো চিকিৎসা পদ্ধতিই একজন অভিজ্ঞ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ মেনে প্রয়োগ করা উচিত।
যেহেতু ভিটিলিগোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, তাই এটি প্রতিরোধ করার কোন সুনির্দিষ্ট উপায় প্রায় নেই বললেই চলে।তবে আপনি ভিটিলিগো বা শ্বেতি হওয়ার ঝুঁকি যেভাবে কমাতে পারেন তা হল-