ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
Home >Blogs >ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ডেঙ্গু জ্বর - কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

Summary

ডেঙ্গু এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। লক্ষণগুলোর মধ্যে হঠাৎ জ্বর, মাথা ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীর ব্যথা ও প্লেটলেট কমে যাওয়া উল্লেখযোগ্য। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে জটিলতা হতে পারে। তাই মশা থেকে সুরক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাই প্রধান প্রতিরোধ।

বর্ষা শুরু হলেই ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এই সময়ে ডেঙ্গুর মশা খুব বেশি সক্রিয় হয় এবং এর কামড় থেকে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু একটি গুরুতর অসুখ, যার ফলে প্রচণ্ড জ্বর, শরীর ব্যথা, গাঁটে ব্যথা ও শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি হয়। এতে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। সাধারণ জ্বরের তুলনায় ডেঙ্গু অনেক বিপজ্জনক, কারণ এর মৃত্যুহার প্রায় ১.৩%। সময়মতো চিকিৎসা নিলে শরীরে লাল রক্তকণিকা (Red Blood Cells) কমে যাওয়া রোধ করা যায় এবং অনেক জটিলতা থেকে বাঁচা যায়।

ডেঙ্গু জ্বর কী?

ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়, যা এডিস মশার (Aedes mosquito) কামড়ে ছড়ায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এটিকে বড় ধরনের রোগের তালিকায় রেখেছে। ডেঙ্গু বেশি দেখা যায় আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।

ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ ধরন আছে — DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4। যদি মশা কোনো আক্রান্ত মানুষকে কামড়ায়, ভাইরাস মশার শরীরে প্রবেশ করে। পরে সেই মশা যখন কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ায়, তখন ভাইরাস রক্তে ঢুকে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

ডেঙ্গু কীভাবে ছড়ায়?

এডিস এজিপ্টি মশা ডেঙ্গু ছড়ায়। আক্রান্ত মানুষকে কামড়ালে ভাইরাস মশার শরীরে যায়, কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ হয় না। ভাইরাস সক্রিয় হতে ৮–১২ দিন লাগে। এরপর মশা সুস্থ কাউকে কামড়ালে ভাইরাস তার রক্তে ঢুকে যায় এবং সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

ডেঙ্গুতে প্লেটলেটসের সংখ্যা ওঠা-নামা করে। সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের প্লেটলেটস ১.৫–৪ লাখ ইউনিট হওয়া উচিত। ১ লাখের নিচে নেমে গেলে তা বিপদের লক্ষণ।

ডেঙ্গু বনাম সাধারণ জ্বর

  • কারণ: সাধারণ জ্বর হয় ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়ায় (যেমন সর্দি, ফ্লু), আর ডেঙ্গু হয় এডিস মশার কামড়ে।
  • লক্ষণ: সাধারণ জ্বরে হালকা থেকে মাঝারি জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা হয় এবং ২–৩ দিনে সেরে যায়। ডেঙ্গুতে হঠাৎ প্রচণ্ড জ্বর (৩৯–৪০°C), চোখের পেছনে ব্যথা, পেশি ও গাঁটে তীব্র ব্যথা ("ব্রেকবোন ফিভার"), ক্ষুধামন্দা, চরম ক্লান্তি হয়। কয়েকদিন পর ত্বকে লাল ফুসকুড়ি বা রক্তক্ষরণের দাগ দেখা যায়।
  • বিশেষ লক্ষণ: ডেঙ্গুতে প্লেটলেটস দ্রুত কমে যায়, ফলে মাড়ি/নাক থেকে রক্ত পড়া, গায়ে নীলচে দাগ বা প্রস্রাবে রক্ত আসতে পারে।
  • চিকিৎসা: সাধারণ জ্বরে বিশ্রাম, তরল খাবারই যথেষ্ট। ডেঙ্গুতে ডাক্তারের তত্ত্বাবধান, নিয়মিত প্লেটলেটস পরীক্ষা ও প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

ডেঙ্গু মশার কামড়ের ৪–৬ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়, যা ১০–১২ দিন থাকে —

  • হঠাৎ উচ্চ জ্বর (১০২°F পর্যন্ত বা বেশি)
  • প্রচণ্ড মাথা ব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • তীব্র ক্লান্তি ও দুর্বলতা
  • ২–৫ দিনের মধ্যে ত্বকে লাল দাগ
  • নাক বা মাড়ি থেকে রক্ত পড়া

এসব হলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান।

ডেঙ্গুর পরীক্ষা

ডেঙ্গু শনাক্তে রক্ত পরীক্ষা হয়, যাতে ভাইরাসের অ্যান্টিবডি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই হয়। দেরি হলে লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT), কিডনি ফাংশন টেস্ট (KFT), এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি করানো হয়।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা

ডেঙ্গুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। চিকিৎসা মূলত লক্ষণ অনুযায়ী হয় —

  • ওষুধ: প্যারাসিটামল বা টাইলেনল ডাক্তারের পরামর্শে নিন (ব্যথা/জ্বরের জন্য)।
  • পানি: বেশি পরিমাণে পানি, স্যুপ, জুস ইত্যাদি পান করুন।
  • পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: চারপাশে পানি জমতে দেবেন না।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়

  • মশারি ব্যবহার করুন, ফুলহাতা জামা পরুন, মশা তাড়ানোর ক্রিম ব্যবহার করুন।
  • বাড়ির-আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না, ড্রাম/টব ঢেকে রাখুন।
  • ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তার দেখান।

উপসংহার

ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচা সবচেয়ে জরুরি। আক্রান্ত হলে শরীর ঢেকে রাখুন, পেঁপে পাতা, গিলয়, ছাগলের দুধ ইত্যাদি খেতে পারেন। সুষম খাদ্য, ব্যায়াম ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ডেঙ্গু ও অন্যান্য রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর

১. ডেঙ্গু কত দিনে ভালো হয়?

সাধারণত ৫–৭ দিনে, কিন্তু কখনও ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

২. ডেঙ্গুর লক্ষণ কী?

উচ্চ জ্বর, মাথা ব্যথা, পেশি ব্যথা, দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, ত্বকে লাল দাগ, বমি, পাতলা পায়খানা।

৩. প্লেটলেটস কত থাকা উচিত?

১.৫–৪ লাখ ইউনিট স্বাভাবিক, ১ লাখের নিচে বিপজ্জনক।

৪. ডেঙ্গুতে কী খাবেন?

পেঁপে পাতা, ছাগলের দুধ, গিলয় ইত্যাদি উপকারী।

৫. কী খাবেন না?

ঝাল-মশলাদার খাবার, জাঙ্ক ফুড, নন-ভেজ, কফি, অ্যালকোহল, সিগারেট।

৬. শিশুদের ডেঙ্গুর লক্ষণ?

উচ্চ জ্বর (১০৪°F), মাথা ব্যথা, গাঁট-পেশি ব্যথা, ক্লান্তি, বমি, ত্বকে লাল দাগ, রক্তপাত।

৭. ডেঙ্গু কি ছোঁয়াচে রোগ?

না, এটি সরাসরি একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না। শুধুমাত্র আক্রান্ত এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়।

৮. ঘরোয়া উপায় কী?

বিশ্রাম নিন, বেশি পানি পান করুন, প্যারাসিটামল নিন, পেঁপে পাতা, ডালিম বা জামের রস খান।

Written and Verified by:

Dr. Rajarshi Sengupta

Dr. Rajarshi Sengupta

Consultant Exp: 23 Yr

Internal Medicine

Book an Appointment

Dr. Rajarshi Sengupta is a Consultant in Internal Medicine Dept. at CMRI, Kolkata, with over 23 years of experience. He specializes in the management of infectious diseases such as dengue, malaria, typhoid, and diphtheria, with a strong focus on patient care and immunizations.

Related Diseases & Treatments

Treatments in Kolkata

Internal Medicine Doctors in Kolkata

NavBook Appt.WhatsappWhatsappCall Now